জুলাই ডকুমেন্টারি ভারতীয় মিডিয়ার জন্য চপেটাঘাত: শফিকুল আলম
Published: 17th, February 2025 GMT
জুলাই আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তৈরি করা ডকুমেন্টারিকে ভারতীয় মিডিয়ার জন্য চপেটাঘাত বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া অনেক আজেবাজে কথা লেখে। আমার মনে হয় এই ডকুমেন্টারিগুলো ভারতীয় মিডিয়ার জন্য চপেটাঘাত।
সোমবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও আন্দোলন নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে। এই আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ আছে। একজন মানবাধিকার কর্মী বলেছেন, ঢাকার বাইরে কীসের আন্দোলন হয়েছে? এই ডকুমেন্টারিগুলো তার প্রমাণ।
তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আমরা এখনো বুঝতে পারি নাই। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা মানেই শোষণের শিকার। আগের সরকার সব সিকিউরিটি ফোর্স দিয়ে আমাদের অধিকার হরণ করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উর্বর ক্ষেত্র হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আপনারা অনেকে বিভিন্ন স্থানীয় মিডিয়া বা জাতীয় মিডিয়ায় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত আছেন। আমার প্রশ্ন হলো, বিশ্বের বিভিন্ন জাতি যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের হাত পাকায় ইউনিভার্সিটি পত্রিকায় কাজ করে। বাংলাদেশে এরকম ব্যক্তিগত গণমাধ্যম দেখা যায় না। এখানে একটা বড় গ্যাপ আছে। আপনারা নতুন যারা আসছেন এরকম কিছু করা যায় কিনা দেখবেন। আপনারা স্বাধীন গণমাধ্যম চর্চা নিশ্চিত করবেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুবিসাসের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ কত
এছাড়াও পড়ুন:
লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক।
উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”
তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।”
চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”
মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।