বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে আসছে নতুন ছাত্রসংগঠন। তাঁরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নতুন এই ছাত্রসংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি হবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি সংগঠন। ‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট’, ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতিতে ছাত্র–নাগরিকের স্বার্থকে বাস্তবায়নের প্রয়াসই হবে এই ছাত্রসংগঠনের মূলমন্ত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই সংগঠনের কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একটি অংশ। নতুন ছাত্রসংগঠনের ঘোষণা দেওয়ার আগে আজ ও আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মতামতের নিতে জনমত জরিপ ও সদস্য সংগ্রহ করা হবে। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সব বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসায় এই প্রচারণা চালানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

তবে নতুন এই ছাত্রসংগঠন কবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বা এর নাম কী হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়নি। যদিও একাধিক সাবেক সমন্বয়ক প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নতুন ছাত্রসংগঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকতে পারেন সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হতে পারেন সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের। এ সময় সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ, জাহিদ আহসানসহ অনেকে তাঁদের পাশে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাইরে এসে নিজস্ব কর্মসূচি অনুযায়ী নতুন এই ছাত্রসংগঠন পরিচালনা করা হবে। সংগঠনের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে, সংগঠনটি কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারি ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অন্ধ অনুকরণের কারণে তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কীভাবে জনবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল, তা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেখা গেছে। বিগত দিনের রাজনীতি বুদ্ধি ও বিবেক বিবর্জিত করে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা রক্ষার পুতুলে পরিণত করেছিল।

মধ্যপন্থী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি

আদর্শিক বাইনারির সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে মধ্যমপন্থী ছাত্ররাজনীতিকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। বলা হয়, উগ্র ডানপন্থী এবং উগ্র বামপন্থী মতাদর্শের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক দূরত্ব, সেই দূরত্বের মাঝখানে দখল বসায় ফ্যাসিবাদ। পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে তৈরি করা সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ইস্যু, রাজনৈতিক ইস্যু, মানবাধিকারের ইস্যু, নাগরিক ইস্যু থেকে শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। অন্যদিকে মধ্যমপন্থী ছাত্ররাজনীতিতে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহনশীলতা প্রদর্শনের চর্চা হয়, যাবতীয় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে গিয়ে জাতীয় ঐক্য এবং সংহতির ভিত্তি রচিত হয়।

নতুন ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি তৈরি করতে চান বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নতুন এই রাজনীতিতে পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে অবমূল্যায়ন করা হবে না। বিভাজনের রাজনীতিতে অপর পক্ষকে শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যে জুজুর ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা হয়, সেই রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান হবে এই সংগঠনের। অপরায়ণের রাজনীতি অপরাজনীতিকে শক্তিশালী করে। ফলে সবার অংশগ্রহণে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনীতিই ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।
মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি, সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে নারীর রাজনৈতিক মানস বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির কথাও বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট’, ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্রসংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রাখতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ক্ষমতা, ভাগবাঁটোয়ারার হিসাবের নিচে চাপা পড়ে গেছে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি। ‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট’, ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতিতে সব অবস্থায় ছাত্র–নাগরিকের স্বার্থকে বাস্তবায়নের প্রয়াসই হবে নতুন ছাত্রসংগঠনের মূলমন্ত্র।

বাংলাদেশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৮, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪—সব গণ–আন্দোলন ও ছাত্র–জনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে ছাত্ররাজনীতি সক্রিয় থাকবে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, নতুন ছাত্রসংগঠনের আদর্শগত ও চেতনাগত ভিত্তি হবে এই ভূখণ্ডের ইতিহাসের সব গণ–আন্দোলন। নতুন ছাত্ররাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চাকে পুনর্বহাল করে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়িত করার প্ল্যাটফর্মগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে। নিয়মিত এবং নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন অব্যাহত রাখার জন্য নতুন ছাত্রসংগঠন সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক সমন বয়ক র র জন ত র জন ত ত র জন ত ক স গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত

অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে মোহাম্মদ সিরাজের মতো আর কোনো পেসার নেই, এভাবে বলাই যায়। কারণ, সিরাজ ও ক্রিস ওকসই এই সিরিজের সব কটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ওকসও ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন, টিকে আছেন সিরাজ।

টিকে থাকা সিরাজ কী করেছেন? গতকাল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৮ ওভারের এক স্পেলে ফিরিয়েছেন ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাকব বেথেলকে। এরপর আরও এক উইকেট। সিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে দুই উইকেটসহ তিনিও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। দুই ‘জীবন’ পাওয়া যশস্বী জয়সোয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রান নিয়ে উইকেটে আছেন।

অথচ কাল প্রথম সেশন শেষে ম্যাচের চিত্র ছিল আলাদা। ইংল্যান্ড প্রথম ১৬ ওভারেই তোলে ১ উইকেটে ১০৯ রান। দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ৭৭ বলে গড়েন ৯২ রানের জুটি। এমন বাজবলীয় শুরুর পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায় দ্বিতীয় সেশনে। শুরুটা করেন কৃষ্ণা। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ক্রলি। পরের গল্পটা সিরাজের। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া সিরাজকে অধিনায়ক গিল যখন বোলিংয়ে আনেন, তখন ইংল্যান্ডের রান ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২। তিনি একে একে ফেরান দুই সেট ব্যাটসম্যান পোপ (২২), রুটকে (২৯) ও বেথেলকে (৬)। এরপর কৃষ্ণার দুই উইকেটে দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি ভারতের হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। তৃতীয় সেশনে আর ৩২ রান যোগ করতে পারে তারা।

আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১১ ঘণ্টা আগেলোকেশ রাহুলকে আউট করার পর অ্যাটকিনসনের আনন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ