বণ্টননামা ছাড়া ওয়ারিশদের নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা যাবে না
Published: 17th, February 2025 GMT
বণ্টননামা দলিল না থাকার অজুহাতে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের যৌথভাবে দাখিল করা নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা যাবে না। সম্প্রতি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি বা স্থাবর সম্পত্তি নামজারির বিষয়টি স্পষ্ট করে একটি পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
পরিপত্রে বলা হয়, ওয়ারিশসূত্রে অর্জিত জমির মালিকদের নামজারি দুইভাবে হতে পারে। কোনো মৃত ব্যক্তির সব ওয়ারিশের নাম একটি খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ওয়ারিশরা যৌথভাবে নামজারির আবেদন করতে পারেন। যৌথভাবে নামজারি (জমাভাগ ছাড়া) করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারদের কাছ থেকে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। এ ধরনের আবেদন পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারি মামলা দায়ের করে খতিয়ানে মৃত ব্যক্তির মোট জমির মধ্যে প্রত্যেক ওয়ারিশের প্রাপ্য হিস্যা উল্লেখপূর্বক নামজারি খতিয়ান সৃজন করে দেবেন। এক্ষেত্রে বণ্টননামা দলিলের প্রয়োজন হবে না।
অন্যদিকে ওয়ারিশরা যদি জমাভাগের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে খতিয়ান সৃজন করে আলাদা-আলাদাভাবে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে চান তাহলে ওয়ারিশরা প্রাপ্যতা অনুযায়ী কে কোন দাগে বা একটি দাগের কোন অংশে জমি ভোগ-দখল করতে চান সকল ওয়ারিশ মিলে তা নির্ধারণ করে একটি আপস বণ্টননামা দলিল সম্পাদন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এভাবে সৃজিত বণ্টননামা দলিল ব্যবহার করে ওয়ারিশরা পৃথক পৃথকভাবে নামজারির আবেদন করলে প্রত্যেক ওয়ারিশের নামে পৃথক পৃথক নামজারি খতিয়ান সৃজন করা যাবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, উত্তরাধিকারমূলে প্রাপ্ত জমি/স্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিশ সনদমূলে উত্তরাধিকাররা যৌথভাবে নামজারি/রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা হলে অনেক ক্ষেত্রে তা নামঞ্জুর করা হচ্ছে-যা যথাযথ নয়। এর ফলে নাগরিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বণ্টননামা দলিল ছাড়া শুধু ওয়ারিশ সনদমূলে খতিয়ানে মৃত ব্যক্তির মোট জমির বিপরীতে প্রত্যেক ওয়ারিশের প্রাপ্য হিস্যা উল্লেখ করে সকল ওয়ারিশদের নামে যৌথ খতিয়ান সৃজন আইনসিদ্ধ।
তবে জমাভাগের মাধ্যমে প্রত্যেক ওয়ারিশের নামে পৃথক পৃথক খতিয়ান সৃজনের ক্ষেত্রে ‘রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০’ এর ১৪৩(খ) উপধারা অনুযায়ী অবশ্যই বণ্টননামা দলিলের ভিত্তিতে নামজারি করতে হবে। সুতরাং মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ব্যক্তিদের আগের খতিয়ান (মৃত ব্যক্তির নামে) ভেঙে পৃথক পৃথক খতিয়ান সৃজনের মাধ্যমে জমাভাগ করার ক্ষেত্রেই শুধু বণ্টননামা দলিল আবশ্যক বলেও জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশদের যৌথভাবে দাখিল করা নামজারির আবেদন বণ্টননামা দলিল না থাকার অজুহাতে নামঞ্জুর করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিষয়টি স্পষ্ট করা হলো বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের
গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত ও শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকনেতাদের মুক্তির দাবিও জানায়।
মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার আলী, আইনবিষয়ক সম্পাদক বিমল চন্দ্র সাহা, নির্বাহী সদস্য আফজাল হোসেন, নির্বাহী সদস্য ও বোম্বে সুইটস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রতন মিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে নেতারা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার চেষ্টার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে গার্মেন্টস উইংয়ের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ৭ জনকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এবং রিকশা শ্রমিকদের রুটি–রুজির আন্দোলনে সংহতি জানানোর অপরাধে চট্টগ্রামে রিকশা সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি আল কাদেরি জয়, মিরাজ উদ্দিন ও রোকন উদ্দিনকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ সরকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তারা শ্রমক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমমান বাস্তবায়ন করবে।
এ সময় নেতারা শ্রম সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা জানতে চান। তাঁরা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া বন্ধ না হলে, শ্রমিকের ওপর নিপীড়ন বন্ধ না হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র পরিচালনা বা বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রতারণা হিসেবে পরিগণিত হবে।
মে দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশ শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম খাতের দুর্দশার যে ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠেছে, তা প্রমাণ করে স্বাধীনতা–পরবতী প্রতিটি সরকার শ্রম শোষণকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
এ সময় গ্রেপ্তার সব শ্রমিকের মুক্তি, শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধ এবং মে দিবসের প্রকৃত চেতনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা।