উল্টে পড়া প্লেন থেকে সবাই জীবিত উদ্ধার
Published: 18th, February 2025 GMT
টরন্টো পিয়ার্সন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ডেল্টা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমান দুর্ঘটনায় সকল যাত্রী ও ক্রু সদস্য জীবিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা ফ্লিন্ট। তবে এ পর্যন্ত ১৮ জন যাত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ যে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি এবং আহতদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর।
তবে জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় একজন শিশু এবং দুই প্রাপ্তবয়স্ক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্লেনটি উল্টে পড়ে আছে এবং এর একটি পাখা নেই। যাত্রীরা উল্টে যাওয়া বিমানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন, আর দমকল কর্মীরা প্লেনটিতে ফোম স্প্রে করছেন।
টরন্টো পিয়ার্সন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিনিয়াপোলিস থেকে আসা ডেল্টা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ৭৬ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। ঘটনার পরপরই টরন্টো পিয়ার্সন বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল, তবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টার দিকে ফ্লাইট পুনরায় চালু করা হয়।
ওন্টারিওর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ‘Ornge’ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে তিনটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি স্থল অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন একটি শিশু, একজন ৬০ বছর বয়সী পুরুষ এবং একজন ৪০ বছর বয়সী নারী।
এ ঘটনায় কানাডার পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং দুটি রানওয়ে কয়েকদিন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বিমানবন্দরের ফায়ার চিফ টড এটকিন জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে রানওয়েটি শুকনো ছিল এবং কোনো বিপজ্জনক ক্রসওয়াইন্ড ছিল না, যা আগের কিছু প্রতিবেদনের সাথে সাংঘর্ষিক।
এটি গত এক মাসে উত্তর আমেরিকার চতুর্থ বড় বিমান দুর্ঘটনা, যার মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসির কাছে একটি যাত্রীবাহী প্লেন ও সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ৬৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা অন্যতম।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে