পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নির্দিষ্ট কোনো সরকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। দুই দেশের স্বার্থের ভিত্তিতেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া উচিত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সীমান্ত হত্যা, আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নিচে সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো—

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা

দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার বৈঠক সম্পর্কে আমাদের বলুন...

তৌহিদ হোসেন: বৈঠকের শুরুটা কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এক ধরনের সম্পর্কে অভ্যস্ত ছিল, যা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে প্রথম দিকে কিছুটা অস্বস্তি ছিল। তবে ছয় মাস পর এখন আমরা আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা চলছে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও অন্যান্য কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

দ্য হিন্দু: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছেন এবং পররাষ্ট্র সচিবের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপনি কি জয়শঙ্করকে এই উদ্বেগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলেই না। আমি জিজ্ঞাসা করিনি, কারণ এটি ভারতের ব্যাপার (তারা অন্য দেশের সাথে কী আলোচনা করবে)। আমি মনে করি না খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও ভারতের উদ্বেগ

দ্য হিন্দু: ভারত বারবার অভিযোগ করছে যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হচ্ছে। ভারত কি মনে করে বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে?

তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব, এবং সরকার সেই দায়িত্ব পালন করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ৫ আগস্টের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচার হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে।

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও ভারতের ভূমিকা

দ্য হিন্দু: শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত ঠিক কী করবে বলে আপনি আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তার (হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আমরা ভারতকে তাকে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছি। যদি তা না হয়, তাহলে অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত, যেন তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেন যা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়াতে পারে।

দ্য হিন্দু: আপনার সরকার কি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানাবে?

তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। আমরা ভারতের কাছ থেকে আগেও অপরাধীদের ফেরত এনেছি। শেখ হাসিনার বিষয়ে মামলা আদালতে রয়েছে, এবং সেই প্রক্রিয়া চলমান। তবে আমরা চাই, ভারতে থাকাকালীন তিনি যেন কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেন।

দ্য হিন্দু: তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর করার জন্য জনতাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তৌহিদ হোসেন: বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

দ্য হিন্দু: আপনার সরকার এখন পর্যন্ত শুধু মৌখিক নোট পাঠিয়েছে, যা হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি কূটনৈতিক নোট। আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?

তৌহিদ হোসেন: আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে) একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে এবং আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আমি মনে করি ভারতও তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে পারে।

দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমএলএটি (পারস্পরিক আইনি সহায়তা) এর জন্য আপনার পর্যাপ্ত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কখন সেই প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আশা করছে?

তৌহিদ হোসেন: ঠিক আছে, সেই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চলমান রয়েছে, কারণ মামলাগুলো এখন আদালতে রয়েছে। আমরা তাদের (তাড়াহুড়ো করে) কাজ করতে বাধ্য করতে পারি না। এবং আমরা এই বিষয়েও অবগত যে— তিনি (হাসিনা) ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারে। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আমরা যা চাই তা হলো— তিনি (হাসিনা) ভারতে থাকাকালীন কোনও ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।

সীমান্ত হত্যা ও জেলেদের ওপর নির্যাতন

দ্য হিন্দু: সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যার বিষয়টি নিয়ে ভারত কী বলছে?

তৌহিদ হোসেন: ২০২৪ সালে, যার অর্ধেক সময় আগের সরকারের অধীনে ছিল, ২৪ জন বাংলাদেশি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এটি বিশ্বের কোথাও দেখা যায় না। যদি কেউ অপরাধ করে, তাকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে, আদালতে পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি গুলি করে হত্যা করা অগ্রহণযোগ্য। ভারত চাইলে এটি বন্ধ করতে পারে এবং এটি বন্ধ হওয়া উচিত।

দ্য হিন্দু: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, বাংলাদেশে বন্দী কিছু ভারতীয় জেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। আপনি কী বলবেন?

তৌহিদ হোসেন: সীমান্ত সমস্যার মতোই, সমুদ্রসীমার ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা আছে। জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে দুই দেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের বন্দী জেলেদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দিয়ে থাকে। তবে নির্যাতনের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। যদি কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আইন ভঙ্গ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা

দ্য হিন্দু: আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ এই গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে আবার আলোচনা করছে। এটি কতটা সত্য?

তৌহিদ হোসেন: বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি অনুযায়ী, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে কয়লার দাম সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা যৌক্তিক নয়। আমরা আশা করি, আদানি গ্রুপের সঙ্গে আরও ভালোভাবে আলোচনা করে একটি ন্যায্য সমাধানে পৌঁছানো যাবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য বৈঠক

দ্য হিন্দু: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি বিমসটেক সম্মেলনে বৈঠক করতে পারেন?

তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই সময়ে একই স্থানে ছিলেন না, তাই সরাসরি বৈঠকের সুযোগ হয়নি। তবে বিমসটেক সম্মেলনে তারা একসঙ্গে থাকবেন। এ ধরনের বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে বসলে অনেক সময় এক কথায় বড় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

দ্য হিন্দু: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ভালো সম্পর্ক ছিল। আপনি কি মনে করেন সেটি আবার আগের মতো হতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো সরকারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর। বিএনপি সরকারের সময়ও (২০০১-২০০৬) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। গঙ্গা পানি চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় (১৯৯৬-২০০১) হয়েছিল।

আমাদের সম্পর্ককে কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করে দুই দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়া উচিত। ভারত ও বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র আছে, যা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট র র জন য উপদ ষ ট সরক র র আম দ র আপন র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ