বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার তাঁর পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসেছেন। তাঁরা এখন ২২ দফা দাবি বাস্তবায়নে অনড় কর্মসূচি শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন।

বেলা দেড়টায় শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাব ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে পাঠদানকক্ষ ও আবাসিক হলসংকট নিরসনে বাজেট বরাদ্দ করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ব্যর্থতা, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভাঙার অভিযোগে করা মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

কর্মসূচিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ, মোশাররফ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শাহেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে সুজয় শুভ বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার বিরোধী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এসব বন্ধ করুন। ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যেসব সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হামলা করেছিল, তাদের কোনো ধরনের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে প্রশাসন। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ সব দাবি আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এম ডি সিহাব, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, রসায়ন বিভাগের হাসিবুল ইসলাম, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মাসুম বিল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আকস্মিকভাবে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ও দুজন শিক্ষক প্রতিনিধিকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরদিন বিকেলে ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের পূর্বনির্ধারিত সভা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এবং একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সানোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে শনিবার রাতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গতকাল সোমবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করেননি। তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসে আগের ২২ দফা, শুক্রবার ঘোষিত ১০ দফার পাশাপাশি আরও ৩ দফা দাবি যোগ করেছেন।
গতকাল সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হন এবং আগের দাবির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি নতুন দাবি যোগ করেন। তিনটি দাবি হলো, জরুরি ভিত্তিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিস্ট বলার কারণে উপাচার্যের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, হঠাৎ করে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি, এরপর শুক্রবার বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ—এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর গতকাল তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: লনরত শ ক ষ র থ উপ চ র য র র পদত য গ

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখন, কোথায়, কীভাবে হামলা চালানো হবে তা ঠিক করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজ বাসভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান-সহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানেই মোদি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন খুশি, যেখানে খুশি পেহেলগামে হামলার বদলা নিতে পারে ভারতীয় সেনা, বিমান ও নৌ-বাহিনী। কীভাবে হামলা চালানো হবে, কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে- সে সব সিদ্ধান্তও স্বাধীনভাবেই নেবে এই তিন বাহিনী। 

যেমনভাবে মনে হবে, সেরকমভাবেই অভিযান চালানোর জন্য তাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তিন বাহিনীর ওপরই পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তিনি।

ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এবং নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠীর সামনেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, কীভাবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে, লক্ষ্যবস্তু কী হবে এবং কখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।

বৈঠক চলে মোট ৯০ মিনিট। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত সপ্তাহেই পাকিস্তানকে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সুর ছিল প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠেও।

সেই আবহেই ভারতে একের পর এক জরুরি বৈঠক চলছে। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠক হয়।

এর ঠিক এক সপ্তাহ আগের মঙ্গলবারেই জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন।

পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপর থেকেই কূটনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।

বন্ধ করা হয়েছে সিন্ধু পানিচুক্তি। নেওয়া হয়েছে আরও একাধিক পদক্ষেপ। জঙ্গি-নিধন অভিযানও চালাচ্ছে ভারত। পেহেলগামে হামলায় যে জঙ্গিরা জড়িত আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, তাদেরকে এখনও ধরা না গেলেও সন্ত্রাসবাদী নিধন অভিযান চলছে। খুঁজে-খুঁজে বের করা হচ্ছে জঙ্গিদের। খবর এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জিডির প্রতিবাদে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ
  • কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি