নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ফেসবুকে লাইভ দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মফিজুর রহমান দিপুর (৬৪) বাড়িতে দুই দফায় হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে দলীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুরি পাড়ার শ্মশান রোডের বিএনপি নেতা দিপুর বাড়িতে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, মফিজুর রহমান দিপু উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, তার স্ত্রী নোয়াখালী জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার, তার ছেলে বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব দাউদ উর রহমান ফারহান ও তার ছোট ছেলে চৌমুহনী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান ফাহিম। 

গত রোববার রাত ৮টার দিকে তার বড় ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা ফারহান ফেসবুক লাইভে এসে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ১/১১ এর আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন কথা বলে।

হামলার শিকার বিএনপি নেতা দিপু বলেন, “ছেলের ফেসবুক লাইভ শেষ হলে একই দিন রাত ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস আমাকে মুঠোফোনে কল দেয়। এক পর্যায়ে হুমকি দিয়ে বলে তোর ছেলেকে ফেসবুক লাইভ ডিলেট করতে বল। তা না হলে তোর পরিবারকে শেষ করে দিব। তোর ছেলে আমাদের ইঙ্গিত করে কথা বলেছে। এর পরের দিন সোমবার রাত ১০টার দিকে একদল অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হামলা করার উদ্দেশ্যে এলাকায় প্রবেশ করে। স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ধাওয়া দিলে তারা আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনায় আমার ছেলে বেগমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।”

দিপু অভিযোগ করে বলেন, “পরবর্তীতে ফেসবুক লাইভের জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল, তার ভাই জাহাঙ্গীর ও সোহাগের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশীয় অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময় তারা আমার বসত ঘরের দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, টিনের বেড়া ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমার ছেলে ফারহান, স্ত্রী পারভীনসহ আমার পরিবারের পাঁচ জনকে বেধড়ক মারধর করে। হামলাকারীরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর অনুসারী। তাদের নির্দেশে এ হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।”

ভুক্তভোগী জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পারভীন আক্তার বলেন, “একই দিন রাত ৯টার দিকে কামাক্ষা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বুলুর অনুসারী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাবুলের ছেলে যুবদল নেতা সুমন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাজন, সাইফুল ও কায়েসের নেতৃত্বে ২৫-৩০ অস্ত্রধারী দ্বিতীয় দফায় আমার বসতঘরে হামলা চালায়। এসময় আমাদের দেখতে আসা ছয়জন ছাত্রদল কর্মী ও দুই প্রতিবেশি নারী, ছেলেকে বাঁচাতে গেলে আমাকেসহ ১৩ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আটটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং আমার গলার একটি চেইন ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।”

তিনি আরো বলেন, “তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চৌমুহনী কলেজের ডিগ্রি শাখার ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক নাহিদকে নোয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বরকত বুলু প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেন। বুলুর নামেই স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। আমার ছেলের অপরাধ ছিল চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ১/১১ এর আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে কথা বলা, যারা সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের ছোট ভাই জাবেদের ভোট করেছে, তাদের নিয়ে কথা বলা।” 

অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস বলেন, “হামলার বিষয়টি আমিও শুনেছি। ফারহান মাদক সেবন করে, এ নিয়ে কার কার সাথে ঝগড়া হয়েছে। এর আগেও অসামাজিক কার্যকলাপে ছিল এবং চাঁদাবাজি, নেশার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বাবা-মা আমাদের দল করে। আমি কাউকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়নি। আমার নির্দেশে কোনো হামলা হয়নি। আমি কেন কারো বাড়িতে হামলা করতে নির্দেশ দেব?”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “দিপু ও তার স্ত্রীকে আমি নেতা বানিয়েছি। তার ছেলে বহিষ্কৃত। তাদের মত ব্যক্তির বাড়িতে আমি কেন হামলার নির্দেশ দেব। তারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। আমি শুনেছি দিপুর ছেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষার সাথে বেয়াদবি করেছে।” 

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান হামলার বলেন, “এটা মনে হয় তাদের দলীয় কোন্দল। ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফারহানকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকায় বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে আগে থেকে দলীয় মনোমালিন্য ছিল। দুই দফায় ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

ঢাকা/সুজন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র ক ন দ র য় ব গমগঞ জ আম র ছ ল ছ ত রদল র রহম ন দল র স চ ম হন আম র ব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩

অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মো. শাকিল (৩১) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের ছোটভাই শুভকেও (২৮) গুলি করলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। পরে তাকে পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে আহত করে। পুলিশ তাৎক্ষণিক হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানাতে পারেনি।  

সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাবর বাজারের ইসলামিয়া মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শাকিল একই গ্রামের মো. সোলাইমান খোকনের ছেলে এবং পেশায় একজন থাই গ্লাস মিস্ত্রি ছিলেন। ঈদুল আযহার আগে শাকিলের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল।

স্থানীয়রা জানায়, রাত ৮টার দিকে শাকিলসহ কয়েকজন ছয়ানীর গঙ্গাবর বাজারের ইসলামিয়া মার্কেটের একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। ওই সময় এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে নয়জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে লাবিব নামে এক যুবককে জোরপূর্বক তুলে নিতে চেষ্টা করে। তখন শাকিলসহ আরো কয়েকজন তাদের বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা শাকিলকে গুলি করে। পিস্তলের গুলি শাকিলের বুকে ও মাথায় বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় তার ছোটভাই শুভ বড়ভাই শাকিলকে বাঁচাতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীর দল কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তাকে পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে আহত করে। গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে তিন জনকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে আটক করে রাখে। তবে তাৎক্ষণিক আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

তাৎক্ষণিক এলাকার লোকজন দুই ভাইকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শাকিলকে মৃত ঘোষণা করে। নিহতের ছোট ভাই শুভ জানান, আটকসন্ত্রাসীদের সাথে স্থানীয় গঙ্গাবর গ্রামের যুবক লাবিবের সাথে পূর্ব বিরোধ ছিল। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে বেগমগঞ্জ উপজেলার আগলাইয়ার পুর ইউনিয়নের নয়জন সন্ত্রাসী সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে এসে লাবিবকে গঙ্গাবর বাজারে এসে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিতে চেষ্টা করে। এসময় বাজারের লোকজনের সাথে শাকিল ও লাবিবকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়। ওই সময় সন্ত্রাসীরা শাকিলকে লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ে। গুলি বুকে ও মাথায় বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় তিনি তার ভাইকে বাঁচাতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে অপহরণকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজন তার ভাই ও শাকিলকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিহত শাকিল বিবাহিত ছিলেন। তার ৮মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্ট্রার বই সূত্রে জানা যায় রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটের দিকে শাকিলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার বুকে ও মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।

ঘটনাস্থলে অবস্থানরতম বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবীবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্খানীয় এলাকাবাসী অস্ত্রধারী তিনজনকে গণধোলাই দিয়ে আটক করে রেখেছে। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালীতে গুলি করে হত্যা: থানায় মামলা, অস্ত্র উদ্ধার
  • নোয়াখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা, ৩ জনকে আটক করে গণধোলাই
  • যুবককে তুলে নিতে বাধা, গুলিতে প্রাণ গেল যুবদল কর্মীর
  • অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩