সংস্কারের গল্প শুনিয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
Published: 19th, February 2025 GMT
সংস্কারের গল্প শুনিয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেসব নতুন নতুন কথা শুনছি, কখনো বলে আনুপাতিক হারের নির্বাচন, কখনো বলে স্থানীয় সরকারের পরে জাতীয় নির্বাচন। তারপর তারা সংস্কার করে শেষ করে যাবে। শেখ হাসিনার বিচার শেষ করে যাবে, এ সমস্ত কথা বলার সুযোগ নেই। তাদেরকে সেই জায়গায় সেই দায়িত্ব কেউ দেয়নি। তাদের একমাত্র দায়িত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিবে।’
আজ বুধবার বিকেলে নোয়াখালীর মাইজদীর জেলা জজ আদালত সড়কে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো এবং দ্রুত নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করে নোয়াখালী জেলা বিএনপি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যদি মনে করে, নির্বাচিত সরকারের জায়গায় তারা অধিষ্ঠিত হয়েছে, এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছু হবে না। তাঁরা নির্বাচনী সরকারের জায়গা পূরণ করার জন্য উপদেষ্টা হননি। তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে একটাই, নির্বাচিত সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করা। আবার বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।’
আরও পড়ুনরাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ থাকলে দয়া করে পদত্যাগ করেন: মির্জা ফখরুল১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সংস্কারের কথা সাত বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন কোনো গল্প আমাদের শোনার দরকার নেই। দেড় বছর আগে তারেক রহমান সাহেব বিএনপিসহ যাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়ে ৩১ দফা সংস্কারের কথা বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তাদের যদি সংস্কারের খুব ইচ্ছা থাকে, তাহলে তারা যে কমিশনের রিপোর্টগুলো তৈরি করেছে, সেগুলো আমরা আগামী নির্বাচিত সংসদে পেশ করতে রাজি আছি। আগামী সংসদ সেগুলো সংসদে আলোচনা করবে, বিবেচনা করবে। যেখানে সংস্কারের প্রয়োজন করবে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যাঁরা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে লাভবান হওয়ার চিন্তা করছেন, আপনারা মনে করছেন আপনারা এই সরকারের একটা অংশ হয়ে গেছেন। এই সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন আপনারা লাভবান হবেন। আপনারা সরকারের অংশ হয়ে থাকবেন, সেটা তো হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আপনি, আপনারা যাঁরা দীর্ঘায়িত করে ক্ষমতার অংশ হিসেবে ক্ষমতা ভোগ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছেন, তাঁদের বলছি, পরিষ্কার করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সে যাঁরাই হোক, যদি আগামী দিনের সরকারে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাড়াতাড়ি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপনারা চলে আসুন। আমরা তো আছিই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়।’
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে কিন্তু সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। আপনাদের কথাবার্তায়, আপনাদের উপদেষ্টাদের কথাবার্তা, তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে মনে হয়, তাঁরা কোনো একদিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। সেই সন্দেহের উদ্রেক যদি হয়, বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনাদের আর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আর যদি গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, তাহলে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া থেকে আমাদের সবাইকে শিক্ষ নিতে হবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান, মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম জাকারিয়া প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন দ র ব এনপ র সরক র র আপন র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠন করার নির্দেশ
বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এমন নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ।
এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফররাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত করা এবং তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদবৈঠকে কমিশন সদস্যরা জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে’বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তাঁরা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তাঁরা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনা করেছেন, মতামত দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানেই গিয়েছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?” আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’