নগরেই ভিন্নভাষী এক পাড়া, বাসিন্দারা কথা বলেন খোট্টা ভাষায়
Published: 20th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার ১৫ নম্বর ঘাট। নদী পারাপারের জন্য এখানে দিন-রাত ভিড় লেগেই থাকে। নগরের সবচেয়ে কাছের দুই উপজেলা আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর বাসিন্দারা এই ঘাট ব্যবহার করেন। কিছুদিন আগে এই ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকার সময় মাঝিদের কথোপকথন কানে আসছিল। ঠিক বাংলা বা স্থানীয় চট্টগ্রামের ভাষা নয়। একটু কাছে গিয়ে শোনার চেষ্টা। সংলাপগুলো এমন, ‘এহোন কিসকা নাম্বার?’, ‘আজ পাসিন্দার কম’, ‘আমরাবি ইনকাম কম উয়াঁই’, ‘সাইনকো পাসিন্দার বারেগা।’
কোন ভাষায় কথা বলছেন, জানতে চাইলে কয়েকজন মাঝি হেসে বললেন, এটা তাঁদের মাতৃভাষা, খোট্টা। অনুবাদও করে দিলেন কথোপকথনের। ‘এখন কার সিরিয়াল’, ‘আমার ইনকাম কম হয়েছে’, ‘সন্ধ্যায় যাত্রী বাড়বে’।
জানা গেল ১৫ নম্বর ঘাটের অনেক মাঝির বাড়িই আনোয়ারা উপজেলার উত্তর বন্দর গ্রামে। ওই গ্রামের ১০ হাজার বাসিন্দা খোট্টা ভাষায় কথা বলেন। ৪০০ বছর ধরে ভাষাটি টিকে আছে। মূলত হিন্দি, উর্দু আর স্থানীয় ভাষার সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে খোট্টা ভাষা। চট্টগ্রাম ছাড়াও ভারতের কলকাতায় এই ভাষার লোকজন রয়েছেন বলে জানা যায়।
আনোয়ারা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে উত্তর বন্দর গ্রাম বা খোট্টাপাড়ার অবস্থান। গ্রামের পশ্চিমে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) আর বঙ্গোপসাগর, উত্তরে মেরিন একাডেমি ও কর্ণফুলী নদী এবং পূর্বে দেয়াঙ পাহাড়। ঘনবসতিপূর্ণ ওই গ্রামে তাঁদের আগমন, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এলাকায় নানান তর্কবিতর্ক থাকলেও লোকজন এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। তবে ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের কারণে তাঁদের পরিচয় ‘খোট্টাভাষী’ কিংবা ‘খোট্টা সম্প্রদায়’ হিসেবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে উত্তর বন্দর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ওই গ্রামের লোকজন দোকানপাট এবং রাস্তাঘাটে পরস্পরের সঙ্গে খোট্টা ভাষায় কথা বলছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল ভারতের বারানসিতে। মোগল শাসনামলে এখানে মগ আর পর্তুগিজ দস্যুদের দমন করতে তাঁদের পাঠানো হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে মোগলদের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের পতনের পর ভারতবর্ষ শাসনের জন্য ১৮৬০ সালে ইংরেজরা পেনাল কোড জারি করে। এর ফলে পেশা হারান খোট্টারা। অনেকেই তখন চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন। এভাবে বন্দর গ্রামে তাঁদের নিবাস গড়ে ওঠে। সে সময় থেকে এখনো তাঁরা নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন।
খোট্টা ভাষায় কথা বলা দুই তরুণ। চট্টগ্রামের আনোয়ারার উত্তর বন্দর গ্রামের খোট্টা পাড়ায় গতকাল সকালে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।
তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।
শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’