রামদা মাহবুব, বহিষ্কার হলেও গ্রেপ্তার হয়নি
Published: 20th, February 2025 GMT
প্রকাশ্যে রামদা হাতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অংশ নেয়া যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে রামদা মাহবুব নিজ দল থেকে বহিষ্কার হলেও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে থাকা সকল সন্ত্রাসীকেই গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আলোচিত মাহবুবুর রহমান খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। ইতিমধ্যেই সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা ক্রস রোড এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান মোল্লা দীর্ঘদিন ধরেই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নগর যুবদলের শফিকুল আলম তুহিন ও শের আলম সান্টুর নেতৃত্বাধীন কমিটির সময় তিনি দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি কমিটিতে নেই। তবে নিজেকে মহানগর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৌলতপুর বিএনপি নেতারা জানান, মাহবুবের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি, মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল আড়ংঘাটা থানায় ১নং মাদক মামলার কার্যক্রম এখনও চলছে। গত ৫ আগস্টের পর এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, প্রবাসীদের হয়রানী করে টাকা আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খানজাহান আলী থানায় বিএনপির অপরপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়ে বর্তমান নেতাদের আস্থাভাজন হন তিনি। এছাড়া কুয়েটের বিভিন্ন দরপত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে ইদানিং কুয়েট এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন মাহবুব। এজন্য সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে দলবল নিয়ে অস্ত্র হাতে নেমে পড়েন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রামদা হাতে তার ছবি ছড়িয়ে পড়লে তাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি ওঠে। রাতেই তাকে বহিষ্কার করে যুবদল।
কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতিমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।”
মাহবুবুর রহমানের দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে তোলা প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। রামদা হাতে ছবিটি পুরাতন এবং একতরফা নির্বাচন প্রতিহতের সময় ধারণ করা বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, “মাহবুবসহ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে থাকা সকল সন্ত্রাসীকেই গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য বদল র স দ লতপ র ক র কর
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।