Samakal:
2025-11-03@21:10:16 GMT

ধ্রুপদি

Published: 20th, February 2025 GMT

ধ্রুপদি

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
শামসুর রাহমান

নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের পুত প্রদেশের শ্যামলিমা
তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই।
কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে শিউলী-শৈশবে
‘পাখি সব করে রব’ বলে মদনমোহন তর্কালঙ্কার
কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক।
তুমি আর আমি অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,
ঘুরেছি কাননে তাঁর নেচে নেচে, যেখানে কুসুমকলি সবই ফোটে
জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।
আজন্ম আমার সাথী তুমি,
আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গড়ে পলে পলে,
তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে আমারই বন্দরে।
গলিত কাচের মতো জলে ফাৎনা দেখে দেখে
রঙিন মাছের আশায় ছিপ ধরে কেটে গেছে বেলা।
মনে পড়ে, কাঁচি দিয়ে নক্সা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে
সেই কবে আমি ‘হাসি খুশি’র খেয়া বেয়ে
পৌঁছে গেছি রত্নদ্বীপে কম্পাস বিহনে।
তুমি আসো আমার ঘুমের বাগানেও
সে কোন বিশাল গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে
নেমে আসো, আসো কাঠবিড়ালীর রূপে, ফুল্ল মেঘমালা থেকে
চকিতে ঝাঁপিয়ে পড়ো ঐরাবত সেজে,
 

 

একুশের কবিতা
আল মাহমুদ

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!

প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।

চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।

প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
l‘পাখির কাছে, ফুলের কাছে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে
 

 

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ মুখের মতোই
দুলে দুলে ওঠো বারবার কিংবা টুকটুকে লঙ্কা-ঠোঁট টিয়ে হয়ে
কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়।
আমার এ অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা।
যুদ্ধের আগুনে, মারীর তাণ্ডবে
প্রবল বর্ষায় কি অনাবৃষ্টিতে
বারবণিতার নূপুর নিক্বনে
বণিতার শান্ত বাহুর বন্ধনে
ঘৃণায় ধিক্কারে, নৈরাজ্যের এলো– 
ধাবাড়ি চিৎকারে
সৃষ্টির ফাল্গুনে, হে আমার আঁখিতারা
তুমি উন্মীলিত সর্বক্ষণ জাগরণে।
তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে কী থাকে আমার?
উনিশ শো’ বাহান্নোর কতিপয় তরুণের খুনের পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী। সে ফুলের একটি পাপড়িও আজ
ছিঁড়ে নিতে দেব না কাউকে।
এখন তোমাকে ঘিরে ইতর বেলেল্লাপনা চলছে বেদম।
এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউরের পৌষ মাস।
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।
lকাব্য : নিজ বাসভূমে; প্রথম প্রকাশ ১৯৬৯

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ