বাংলা ভাষা কি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত
Published: 21st, February 2025 GMT
বাংলা ভাষার ইতিহাসকে আমরা প্রধানত বুঝে থাকি জাতীয়তাবাদী আবেগ ও অহমিকার ওপর দাঁড়িয়ে। এই অতীতমুখিনতার কারণে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎকে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। একই সঙ্গে বুঝতে পারি না যে ঐতিহাসিক পাটাতন প্রস্তুত করতে আবেগের মূল্য থাকলেও বাস্তব দুনিয়ার দৈনন্দিন লড়াইয়ে আবেগ ও অহমিকার ভূমিকা খুবই কম। কেননা, একটি ভাষাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হয়, অন্য ভাষার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়, আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপদগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হয়।
একসময় বাংলা ভাষাকে ইংরেজির বালাই থেকে মুক্ত হতে হয়েছে, উর্দুর সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী আরবি, ফারসি, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দির সঙ্গে আপসও করতে হয়েছে। নয়তো বাংলা ভাষার কাঠামোই তৈরি হতো না।
প্রশ্ন হলো ভবিষ্যতের জন্য বাংলা ভাষা কতখানি প্রস্তুত? বাংলা শিখন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কেমন? প্রযুক্তি ও বাংলা ভাষার সম্পর্ক তৈরিতে সরকার পরিচালিত কাজের পরিসর কতটুকু এগিয়েছে? বাংলা ভাষার সামনে নতুন কোনো বিপদ আছে কি?
দেখতে পাই, নতুন বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইংরেজি ভাষার নব্য-আধিপত্য। বাংলা ভাষার ওপর ইংরেজির শক্তপোক্ত প্রভাব পড়েছে। নতুন প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের প্রধান ভাষা হয়ে উঠেছে ইংরেজি। নিউ মিডিয়া ও ইংরেজি ভাষা অঙ্গাঙ্গি সম্পর্কে আবদ্ধ। সাংস্কৃতিক উপকরণ ও উপাদানগুলোর ভোক্তা হিসেবে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী এই ভাষাজগতের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধ্য। ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রতিনিয়ত উৎপাদিত আধেয়র বিরাট অংশ ইংরেজিনির্ভর। এ কারণে অনুমান করাই যায়, শ্রোতার মনে তার একটি রেশ থেকে যাবে।
আর তাই ইংরেজি ভাষা দাপটের সঙ্গে বাংলা ভাষার ওপর খবরদারি করছে। প্রয়োজন ছাড়াই বাংলার বিকল্প হিসেবে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করার ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। লেখা ও বলায় এর প্রকোপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলা বাক্যকাঠামোয় ঢুকে যাচ্ছে ইংরেজি শব্দ ও বাক্যাংশ। মিশ্রণের এই প্রবণতা বড় যে ক্ষতিটি করছে, তা হলো ইংরেজি ভাষার স্বাভাবিকীকরণ ঘটাচ্ছে; বিকল্প হিসেবে ইংরেজি গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করে দিচ্ছে। এমন নয় যে প্রাসঙ্গিক বাংলা শব্দগুলো উদ্দিষ্ট ভাব বোঝাতে অক্ষম; বরং বাংলা শব্দ ব্যবহার না করার ফলেই শব্দের স্বাভাবিক প্রয়োগযোগ্যতা নষ্ট যাচ্ছে।
বাংলা ভাষা নতুন আরেক বিপদের মুখোমুখি; তা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় বাংলা লিখন ও অনুবাদ। ইদানীং চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে অনেক শিক্ষার্থীকেই বাংলা লিখতে দেখছি; দ্রুততার সঙ্গে তঁারা তৈরি করে ফেলছেন প্রত্যাশিত লেখা। গুগল ট্রান্সলেটরের সহায়তায় ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করছেন কেউ কেউ। এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা হাতে তুলে নিচ্ছেন চ্যাটজিপিটি ও গুগল ট্রান্সলেটরকে।
এসব আধেয় ও অনুবাদ মূলত যন্ত্রপ্রসূত। শব্দগুলো বাংলা ভাষার, কিন্তু বাক্যরীতি ইংরেজির। অনেক ক্ষেত্রে বাক্যকাঠামো ঠিক থাকলেও শব্দের পরিপ্রেক্ষিত ঠিক নেই। লেখাগুলোয় থেকে যাচ্ছে প্রচুর বানানবিভ্রাট। এ ধরনের বাংলা লিখতেন উনিশ শতকের ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ কিংবা শ্রীরামপুর মিশনের ইংরেজ পণ্ডিতেরা। দুর্বল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে বাংলাভাষী কেউ এমন বাংলা লিখুক, তা আমরা চাই না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন বাংলার খোপে বন্দী হোক, তা–ও আমাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। যদি না চাই, তার মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি প্রয়োজন।
শুদ্ধ বাংলা শেখার জন্য মানসম্মত অ্যাপস ও গেমসের কথা আমরা ভাবতে পারি। ভাবা যেতে পারে বাংলা ব্যাকরণের অনলাইন সংস্করণের কথা, যার সহায়তা নিয়ে স্থানীয়-অস্থানীয় যেকেউ চাইলেই প্রয়োজনমাফিক ব্যাকরণিক জ্ঞান গ্রহণ করতে পারবে এবং নিজের লেখার শুদ্ধ্যশুদ্ধির সমস্যা দূর করতে পারবে। প্রশ্ন দাঁড়ায়, কাজগুলো করবে কে? আমাদের ভাষা–পরিকল্পনা আছে কি? এসব প্রশ্নের জবাবও নেতিবাচক।সম্প্রতি লোকগল্প–বিষয়ক একটি অনুবাদগ্রন্থ পড়ে স্তম্ভিত হলাম। কারণ, দুর্বল যন্ত্রানুবাদের কারণে ভাষার অভ্যন্তর কাঠামোয় রয়ে গেছে ইংরেজির গভীরতর ছাপ। একইভাবে বিস্মিত হয়েছি একটি দৈনিকে প্রকাশিত ফিচার পড়তে গিয়ে। সংশ্লিষ্ট লেখকও যন্ত্রানুবাদের সহায়তা নিয়েছেন। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থী বা লেখকের অনুধাবন ও লিখনপ্রক্রিয়ায়। প্রযুক্তিনির্ভরতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে লেখক–শিক্ষার্থীর কল্পনাপ্রসূত বাংলা লিখন। প্রারম্ভিক কল্পনার সুযোগ না নিয়েই একজন লেখক বা শিক্ষার্থী চ্যাটজিপিটির দ্বারস্থ হচ্ছেন। এতে ওই ব্যক্তির স্মৃতিতে সঞ্চিত হচ্ছে না প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় শব্দ, গড়ে উঠছে না নিজস্ব শব্দভান্ডার। বিঘ্নিত হচ্ছে কপিরাইট বা লেখকস্বত্বের ধারণা।
তাই বলে প্রাযুক্তিক বাস্তবতাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারব? সম্ভবত না। নতুন প্রযুক্তিকে মেনে নিয়েই উদ্ভূত সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। বাংলা ভাষাকে নিয়ে আসতে হবে প্রযুক্তির কাছাকাছি। বাংলা ভাষার অভিধান, বানানরীতি ও ব্যাকরণকে সহজলভ্য করে তুলতে হবে। এই বাস্তবতায় কোনো অভিধানের পিডিএফ সংস্করণের চেয়ে প্রভাবশালী হতে পারে অভিধানের ওয়েবসাইট। যেখান থেকে সহজেই পছন্দসই শব্দটি নির্বাচন করে নেওয়া যাবে, থাকবে সমার্থক শব্দ, শব্দের ব্যুৎপত্তিগত ইতিহাস, প্রাচীন ও সাম্প্রতিক প্রয়োগের দৃষ্টান্ত।
প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই বাংলা ভাষা শিখনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা জরুরি। প্রযুক্তির ক্রম–উত্থান দেখে অনুমান করাই যায়, পৃথিবীর ভাষাগুলো পরস্পরের কাছাকাছি এসে দাঁড়াবে। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে যে ভাষা যত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, সে ভাষা তত বেশি তার সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে। যেমন ভাষাশিক্ষা প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান ডুয়োলিঙ্গোর দেওয়া তথ্যমতে, কোভিড পরিস্থিতিতে স্প্যানিশ হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় অধ্যয়নের ভাষা। এর পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির ইতিবাচক অবদান।
শুদ্ধ বাংলা শেখার জন্য মানসম্মত অ্যাপস ও গেমসের কথা আমরা ভাবতে পারি। ভাবা যেতে পারে বাংলা ব্যাকরণের অনলাইন সংস্করণের কথা, যার সহায়তা নিয়ে স্থানীয়-অস্থানীয় যেকেউ চাইলেই প্রয়োজনমাফিক ব্যাকরণিক জ্ঞান গ্রহণ করতে পারবে এবং নিজের লেখার শুদ্ধ্যশুদ্ধির সমস্যা দূর করতে পারবে। প্রশ্ন দাঁড়ায়, কাজগুলো করবে কে? আমাদের ভাষা–পরিকল্পনা আছে কি? এসব প্রশ্নের জবাবও নেতিবাচক।
অবশ্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে ভাষাবিষয়ক কিছু ধারা-উপধারা আছে। ২০২৪ সালে প্রণীত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক নীতিমালার খসড়া। এখানে এআইয়ের সহায়তায় ভাষার বাধা ঘুচে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো ভাষানীতি নেই। অথচ ভাষা–পরিকল্পনা ও নীতি ছাড়া ভাষার বিস্তার সম্ভব নয়। দমন করা সম্ভব নয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রসূত চিন্তার কুম্ভিলকবৃত্তি। সামগ্রিক বাস্তবতায় বলা চলে, বাংলা ভাষা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত নয়।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের একটি ভাষা কমিশন দরকার। ভাষাবিজ্ঞানী, ভাষা–গবেষক, শিক্ষক, ভাষাপ্রযুক্তিবিদ এবং সরকারি প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত ভাষা কমিশনের কাজ হবে দেশে বিদ্যমান ভাষা-পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে ভাষানীতি প্রণয়ন করা। এই নীতি কাজ করবে বাংলাদেশে বিদ্যমান ভাষার প্রয়োগ-পরিসর নিয়ে। সেখানে প্রধানত গুরুত্ব পাবে ভবিষ্যতের উপযোগী বাংলা ভাষা।
সুমন সাজ্জাদ অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ব যবহ র ব য করণ আম দ র অন ব দ করণ র
এছাড়াও পড়ুন:
দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি
মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’
এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫