বরিশালে বিরান মাঠে শর্ষের আবাদ, কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক
Published: 21st, February 2025 GMT
মাঠভরা শর্ষেখেত। গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমারোহ। পাশ দিয়ে গেলে সবারই নজর কাড়ছে। এ চিত্র বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের হিজলতলা গ্রামের। এই গ্রামের অন্তত ৮০ জন কৃষক ৩৮ একর জমিতে বিনা উদ্ভাবিত উন্নত জাতের বিনা-৯ ও বিনা-১১ জাতের শর্ষে আবাদ করেছেন। এর মধ্যে বিনা-৯ জাতটি এবারই প্রথম চাষ করা হলো।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, আগে আমন মৌসুম শেষে মাঠের জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। সেই জমিতে এখন শর্ষে চাষ করা হয়েছে।
এই গ্রামের কৃষক সরোয়ার মল্লিক এবার তিন বিঘা জমিতে শর্ষের আবাদ করেছেন। খেতের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘দ্যাহেন, কত্তো সুন্দর খ্যাত। চউখ জুড়াইয়্যা যায় বাড়ন্ত গাছ আর ফুল দেইখ্যা। এইবার দুই বিঘা জমিতে শর্ষে দিছি। আশা করি, অনেক ভালো ফলন পামু। আমাগো দেহাদেহি আগামীতে এই এলাকার অনেক কৃষক শর্ষে আবাদ করার মনস্থির করছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা আগে শর্ষের আবাদ করতেন কম। বছর পাঁচেক ধরে এই ফসলের আবাদ বাড়ছে। শর্ষে আবাদে উৎসাহ ও উদ্বুদ্ধ করতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হিজলতলা গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল মাঠ দিবস। এ উপলক্ষে শর্ষেখেতের পাশে বানানো হয়েছিল ছোট্ট মঞ্চ। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন মহাপরিচালক মো.
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শর্ষে থেকে উৎপাদিত তেল অত্যন্ত নিরাপদ। অথচ আমরা ভোজ্যতেল হিসেবে বেশি ব্যবহার করছি সয়াবিন, যা সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ভোজ্যতেল আমদানিতে। তাই সরকারের লক্ষ্য হলো ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে শর্ষের আবাদ বাড়ানো। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে এমন জাত প্রয়োজন, যার জীবনকাল কম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলে লবণাক্ততা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি খাত হুমকির মুখে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে শস্যের নিবিড়তা আনয়নের বিকল্প নেই। সেই চেষ্টা অংশ হিসেবে বিনা জলবায়ুসহিষ্ণু বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো বিনা-৯ ও বিনা–১১, যা আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে বরিশাল অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল আলম তরফদার, উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনা বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছয়েমা খাতুন।
আঞ্চলিক কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বরিশাল সদরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাসেল মনির, বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদ আল নূর, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলুর রহমান, কৃষক সরোয়ার হোসেন মল্লিক প্রমুখ।
কৃষকদের শর্ষে আবাদে উৎসাহ দিতে আয়োজন করা হয়েছে মাঠ দিবস। গতকাল দুপুরে বরিশাল সদর উপজেরার চাঁদপুরা ইউনিয়নের হিজলতলা গ্রামেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রকল প বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’