এ টি এম আজহারের মুক্তির দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘গণ–অবস্থান’ কর্মসূচি দিল জামায়াত
Published: 21st, February 2025 GMT
কারাবন্দী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের পর এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটি জানিয়েছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই ‘গণ-অবস্থান’ হবে। কর্মসূচিতে দলের আমির শফিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ১৩ বছরের অধিক সময় কারাগারে আটক আছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মী মুক্তি লাভ করেছেন। দেশবাসী আশা করেছিল, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার আজহারুল ইসলামও স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তি লাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাড়ে ছয় মাস অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এ টি এম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাননি। এতে দেশবাসী হতবাক ও বিস্মিত।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান নিজের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেন, এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে তিনি (শফিকুর রহমান) স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে থাকবেন। তিনি লেখেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সময়মতো আমাকে যথাস্থানে পাবে, ইনশা আল্লাহ।’
এই ঘোষণার পরদিন জামায়াত তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচির ঘোষণা দিল। এর আগে এ টি এম আজহারুলের মুক্তির দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে জামায়াত।
ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির সরকারকে ‘ধৈর্যের পরীক্ষা’ না নিতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ভদ্র, বোকা নই। ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। জামায়াত সাড়ে ১৫ বছর কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে, কিন্তু আপস করেনি।’
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তিনি ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এই আবেদন শুনানির দিন ধার্য ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি; কিন্তু শুনানি হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ চিন্তা করতে পারেনি, তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারা দেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছেমতো কেড়েও নেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথাগুলো বলেন।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২০১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের সব অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিকে ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সব স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না। নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যাঁরা নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চাইবেন, জনগণ তাঁদের প্রতিহত করবেন।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালিমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। গণসংযোগের সময় স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়।