ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত জি২০ সম্মেলনে এই ইস্যুতে বেইজিং তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিতের জন্য ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সাম্প্রতিক ঐকমত্যসহ যে কোনো প্রচেষ্টার প্রতি বেইজিংয়ের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। চলমান সংকটের সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধানের জন্য গঠনমূলক অবদান রাখতে চীন সবসময় প্রস্তুত আছে।
গত সপ্তাহে মিউনিখে আয়োজিত নিরাপত্তা সম্মেলনে ওয়াং বলেছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান-সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণ জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান নড়বড়ে হওয়া ঠেকানোর চেষ্টাই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্যে ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কূটনৈতিকভাবে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ে রাশিয়ার ওপর এতদিন এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল চীন। এতে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছিল তারা। কিন্তু ট্রাম্প অকস্মাৎ পুতিনকে যেভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশ্বদরবারে নিয়ে আসার পাঁয়তারা করছেন, এতে বেইজিং তাদের ইউরোপীয় সম্পৃক্ততা হারাতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আবার আলোচনায় বসতে হবে এবং ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে একটি চুক্তি করতে হবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদের অংশীদারিত্ব দাবি করলে গত বুধবার জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ওয়াল্টজ বলেন, সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ অপমান করার কারণে হোয়াইট হাউস জেলেনস্কির প্রতি ‘খুব হতাশ’।
জেলেনস্কিকে নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন ইলন মাস্ক। তাঁর দাবি, ইউক্রেনের জনগণ জেলেনস্কিকে ঘৃণা করে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা থেকে জেলেনস্কিকে বাদ রাখার অধিকার আছে ট্রাম্পের। অন্যদিকে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলগের মধ্যকার বৈঠক-পরবর্তী পরিকল্পিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে। খবর রয়টার্স ও আলজাজিরার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র র অবস
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।