শীতের বিদায় লগ্নে ফাল্গুনের বাতাসে কোকিলের কুহুতান আর পলাশ-শিমুলের লালিমায় ভরে যায় প্রকৃতি। শীতের খোলস ছেড়ে প্রকৃতিতে এখন বইতে শুরু করেছে দখিনা হাওয়া। বছর ঘুরে প্রকৃতি তার নানা পরিবর্তন পেরিয়ে আবার সেজেছে নতুন রূপে।

শীতের শেষ ও বসন্ত শুরুর মাঝামাঝি সময়ই প্রকৃতি নিজেকে পাল্টে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় থেকেই গাছে গাছে ফুলের মুকুল দেখা দেয়। ধূসর কুয়াশা সরে গিয়ে বাগানজুড়ে খেলা করে সোনারোদ। শীতে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার গজাতে শুরু করেছে নতুন পাতা। মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতাদের পাশ কাটিয়ে জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেও লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। ক্যাম্পাস জুড়ে ফুটে আছে বাহারি জাতের নয়নাভিরাম ফুল। এসব ফুলের দিকে তাকালে যে কারো মন শান্ত ও সতেজ হয়ে যাবে। আবাসিক হল, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে গোল চত্ত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের পাশে সারিবদ্ধভাবে ফুটে আছে ফুল।

এর মধ্যে রয়েছে- ডায়ান্থাস, টগর, পিটুনিয়া, ডালিয়া, গাঁদা, বিভিন্ন জাতের গোলাপসহ নানা জাতের ফুল। 

প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশদ্বারে ডালিয়া ফুলের ছোট্ট বাগান যে কারো চোখের নজর কেড়ে নিবে। এছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তনের আয়োজনে ‘বসন্ত উৎসব- ১৪৩১’ উদযাপন করার মধ্য দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হয়। সেদিন মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা ফুলসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিধান করে ক্যাম্পাস রাঙিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ফুটে থাকা ফুলগুলোর প্রতি মুগ্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনে প্রশান্তি ও সৃজনশীল মনোভাব তৈরি করছে জানিয়ে রাইজিংবিডির কাছে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আরভী আক্তার বলেন, “বসন্ত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে নানান রঙের ফুলের শোভা দেখে সত্যিই মন ভালো হয়ে যায়। বসন্তের মৃদু হাওয়া আর উজ্জ্বল রোদে ফুলগুলো আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। বসন্তে ক্যাম্পাসে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, শিমুলসহ বিভিন্ন রকমের ফুল ফুটে যা শুধু ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বরং শিক্ষার্থীদের মনে প্রশান্তি ও সৃজনশীলতার মনোভাব তৈরি করে।”

তিনি বলেন, “শীতের পর বসন্তের আগমনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। শীতে যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ে তখন সেই শূন্যতা ও নিস্তব্ধতা মন খারাপের অনুভূতি জাগায় কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই শূন্যতাকে ফুলে ফুলে ভরে তুলে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে প্রকৃতির সজীবতা।”

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিটন দেব বলেন, “কুবিতে ভর্তি হওয়ার পর আমাকে যেসব বিষয় গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, তন্মধ্যে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যতম। বিশেষ করে গোল চত্বরসহ ক্যাম্পাসের কিছু আঙ্গিনা ঘিরে রয়েছে বাহারি রঙের ফুলের সমাহার। এসব ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যে যোগ করেছে এক অনন্য মাত্রা। এসব ফুল প্রতিনিয়ত আমাদের মনকে করে তোলে শান্ত ও সতেজ।”

ফুল গাছের পরিচর্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শাহ আলম খান বলেন, “অনেকগুলো নার্সারি থেকে এসব ফুলের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রতি মৌসুমে আমরা এসব চারা রোপণ করি। নিজস্ব লোক দ্বারা ফুল গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়।”

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক য ম প স র স ন দর য এসব ফ ল বসন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ