বসন্তের সাজে সেজেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 22nd, February 2025 GMT
শীতের বিদায় লগ্নে ফাল্গুনের বাতাসে কোকিলের কুহুতান আর পলাশ-শিমুলের লালিমায় ভরে যায় প্রকৃতি। শীতের খোলস ছেড়ে প্রকৃতিতে এখন বইতে শুরু করেছে দখিনা হাওয়া। বছর ঘুরে প্রকৃতি তার নানা পরিবর্তন পেরিয়ে আবার সেজেছে নতুন রূপে।
শীতের শেষ ও বসন্ত শুরুর মাঝামাঝি সময়ই প্রকৃতি নিজেকে পাল্টে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় থেকেই গাছে গাছে ফুলের মুকুল দেখা দেয়। ধূসর কুয়াশা সরে গিয়ে বাগানজুড়ে খেলা করে সোনারোদ। শীতে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার গজাতে শুরু করেছে নতুন পাতা। মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতাদের পাশ কাটিয়ে জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেও লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। ক্যাম্পাস জুড়ে ফুটে আছে বাহারি জাতের নয়নাভিরাম ফুল। এসব ফুলের দিকে তাকালে যে কারো মন শান্ত ও সতেজ হয়ে যাবে। আবাসিক হল, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে গোল চত্ত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের পাশে সারিবদ্ধভাবে ফুটে আছে ফুল।
এর মধ্যে রয়েছে- ডায়ান্থাস, টগর, পিটুনিয়া, ডালিয়া, গাঁদা, বিভিন্ন জাতের গোলাপসহ নানা জাতের ফুল।
প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশদ্বারে ডালিয়া ফুলের ছোট্ট বাগান যে কারো চোখের নজর কেড়ে নিবে। এছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তনের আয়োজনে ‘বসন্ত উৎসব- ১৪৩১’ উদযাপন করার মধ্য দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেওয়া হয়। সেদিন মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা ফুলসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিধান করে ক্যাম্পাস রাঙিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ফুটে থাকা ফুলগুলোর প্রতি মুগ্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনে প্রশান্তি ও সৃজনশীল মনোভাব তৈরি করছে জানিয়ে রাইজিংবিডির কাছে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আরভী আক্তার বলেন, “বসন্ত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে নানান রঙের ফুলের শোভা দেখে সত্যিই মন ভালো হয়ে যায়। বসন্তের মৃদু হাওয়া আর উজ্জ্বল রোদে ফুলগুলো আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। বসন্তে ক্যাম্পাসে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, শিমুলসহ বিভিন্ন রকমের ফুল ফুটে যা শুধু ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বরং শিক্ষার্থীদের মনে প্রশান্তি ও সৃজনশীলতার মনোভাব তৈরি করে।”
তিনি বলেন, “শীতের পর বসন্তের আগমনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। শীতে যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ে তখন সেই শূন্যতা ও নিস্তব্ধতা মন খারাপের অনুভূতি জাগায় কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই শূন্যতাকে ফুলে ফুলে ভরে তুলে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে প্রকৃতির সজীবতা।”
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিটন দেব বলেন, “কুবিতে ভর্তি হওয়ার পর আমাকে যেসব বিষয় গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, তন্মধ্যে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যতম। বিশেষ করে গোল চত্বরসহ ক্যাম্পাসের কিছু আঙ্গিনা ঘিরে রয়েছে বাহারি রঙের ফুলের সমাহার। এসব ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যে যোগ করেছে এক অনন্য মাত্রা। এসব ফুল প্রতিনিয়ত আমাদের মনকে করে তোলে শান্ত ও সতেজ।”
ফুল গাছের পরিচর্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শাহ আলম খান বলেন, “অনেকগুলো নার্সারি থেকে এসব ফুলের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রতি মৌসুমে আমরা এসব চারা রোপণ করি। নিজস্ব লোক দ্বারা ফুল গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক য ম প স র স ন দর য এসব ফ ল বসন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আদালতে ঝুলছে ২২ হাজার মামলা
সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং ১৩টি শ্রম আদালতে মামলাজট কমছে না। মামলার তুলনায় নিষ্পত্তি কম হওয়ায় বাড়ছে জট। আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। তবে ১৩টি শ্রম আদালতে ৬ মাসের বেশি হয়েছে এমন ১৩ হাজার ৪০২টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে সব শ্রম আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ছিল ২২ হাজার ৭৩৭টি। ওই মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৮৮টি মামলা। এর মধ্যে ৬টি বিভাগীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন ৫০৫টি মামলা। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শ্রম আদালতে বিচারাধীন ছিল ২১ হাজার ৬১টি মামলা।
বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, বিচারক সংকট, মামলা ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহার না করা এবং আইনজীবী ও মালিকপক্ষের বারবার সময় নেওয়ার প্রবণতার কারণে মামলা নিষ্পত্তির গতি কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, ‘কয়েকটি শ্রম আদালতে বিচারকের সংখ্যা মামলার তুলনায় অপ্রতুল। অনেক সময় মামলার নথি প্রস্তুত বা সাক্ষী হাজির করার প্রক্রিয়াও দীর্ঘ হয়, যে কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে গড়ে ৩ থেকে ৫ বছর লেগে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, মামলার আধিক্য অনুযায়ী শ্রম আদালতের কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। তা না হলে শ্রম আদালতের প্রতি শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষ আস্থা হারাবে। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইন দ্রুত যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
ঢাকার আদালতে ভয়াবহ জট
পরিসংখ্যান বলছে, শ্রমিকদের করা ১০ হাজার ৫৮৯টি মামলা ঢাকার তিনটি শ্রম আদালতে ঝুলে রয়েছে। মার্চ মাসের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার ১ম শ্রম আদালতে বিচারাধীন ৪ হাজার ৬৭৬টি মামলা। ওই মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৭১টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন যথাক্রমে ৩ হাজার ২৯৯ এবং ২ হাজার ৬১৪টি মামলা। নিষ্পত্তি হয়েছে যথাক্রমে ১২৫ ও ৭৩টি।
চট্টগ্রামের চিত্র অনেকটা একই রকম। প্রথম শ্রম আদালতে ১ হাজার ৩৭৬টি এবং দ্বিতীয় আদালতে ৫৫৪টি মামলা বিচারাধীন। চট্টগ্রামে মোট বিচারাধীন ১ হাজার ৯৩০টি মামলার মধ্যে মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৭টি। ওই মাসে হয়েছিল ৫২টি মামলা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রম আদালতে যথাক্রমে ২ হাজার ১৩৩ এবং ৫ হাজার ৫২৮টি মামলা বিচারাধীন। মার্চ মাসে এ দুই আদালতে নিষ্পত্তি হয় ৪২৩টি মামলা; একই সময়ে করা হয়েছিল ২০৮টি মামলা।
অন্য ৬টি আদালতের চিত্র
বর্তমানে খুলনায় ৯১টি, রাজশাহীতে ৭৩, রংপুরে ৭৫, সিলেটে ৪৮, কুমিল্লায় ১৫২ এবং বরিশালে ৬৬টি মামলা বিচারাধীন। এ ৬টি বিভাগীয় শ্রম আদালতে সব মিলিয়ে বিচারাধীন ৫০৫টি মামলা।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালেও ঝুলছে অনেক মামলা
শ্রম আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার রায় বা যে কোনো আদেশের বিরুদ্ধে মালিক বা শ্রমিকের আপিল করার সুযোগ আছে। এজন্য আইন অনুযায়ী ঢাকায় গঠিত হয়েছে একমাত্র শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একটিমাত্র ট্রাইব্যুনাল থাকায় দেশের বিভাগীয় বা জেলা আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হলেও এর বিরুদ্ধে আপিল দায়ের বা শুনানির জন্য সংক্ষুব্ধ পক্ষকে (মালিক বা শ্রমিক) ঢাকায় আসাতে হয়। তবে অনেক শ্রমিকই ঢাকায় এসে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেত উৎসাহী হন না। আবার মামলা জটের কারনেও শ্রম আদালতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। একইভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রম আদালত ও আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে বছরের পর বছর মামলা ঝুলিয়ে রাখে। এতেও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় এবং শ্রমিকরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ১ হাজার ২২৩টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৪১টি মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া ৬ মাসের বেশি হয়েছে এমন মামলা শ্রম আপিল ট্রাইবুন্যালে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৮২২টি।
বিচার পেতে বছর গুনছেন শ্রমিকরা
রূপগঞ্জের গার্মেন্ট শ্রমিক মনিরা আক্তার বকেয়া বেতন ও ছাঁটাইয়ের ক্ষতিপূরণ দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত পাঁচবার বিচারক বদল হয়েছে এবং মামলার সাক্ষ্য পর্বই শেষ হয়নি। মনিরা বলেন, ‘আগে মামলার খোঁজখবর রাখতাম। শুধু তারিখ দেয়। বিচারক থাকেন না। মালিকপক্ষের আইনজীবীও বারবার সময় নেন। এখন আর খবর নিই না। সারাদিন আদালতে ঘুরলে চাকরি থাকত না।’
জনবল সংকট
আপিল ট্রাইব্যুনাল ও ১৩টি শ্রম আদালতে বর্তমানে ৫৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি শ্রম আদালতে রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। তাই এসব আদালতে আদেশের অনুলিপি সংগ্রহ, মামলা করা, কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তি করাসহ নানা ক্ষেত্রে মামলা-সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি হচ্ছে। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. হেদায়েতুল ইসলাম সমকালকে বলেন, শূন্য পদ পূরণে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর আইন উপদেষ্টা (অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ) এসএম রেজাউল করিম বলেন, ‘শ্রম মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে সচেতন হতে হবে। আইনে বলা আছে, সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। বাস্তবে তা হয় না। আইনজীবীরাও মামলা দীর্ঘায়িত করেন। অনেক সময় শ্রমিকপক্ষ উপস্থিত থাকে, অথচ মালিকপক্ষ বারবার সময় নেয়।’
তিনি আরও বলেন, শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়টিও দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। এটি দ্রুত হওয়া প্রয়োজন।’
এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘শ্রম আইন সংশোধনের জন্য আমরা চার-পাঁচ মাস ধরে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। শ্রম কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা সেটি এবং খসড়া আইন পর্যালোচনা করছি। আশা করছি,
জুলাই-আগস্টের মধ্যে নতুন আইন প্রণীত হবে।’ সচিব আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা, আদালত পুনর্বিন্যাস ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থার কথা নতুন আইনে থাকছে। এতে হয়রানি কমবে।’