যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিদিন উদ্বেগজনক খবর আসছে। এর মধ্যে একটি হলো ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ইলন মাস্ক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

মাস্ক ইউএসএআইডি সম্পর্কে বলেছেন, এটি ‘অপরাধমূলক সংগঠন’ এবং এটিকে বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে। ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট ডাউন হওয়ার, আসলে কী ঘটছে, তা নিয়ে খুব কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটির অর্থায়ন স্থগিত করে দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মীকে তাঁদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার জনস্বাস্থ্যকর্মী এবং উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ফেডারেল সংস্থা, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশগুলো ও মানুষের মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে থাকে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক ইউএসএআইডির দুই হাজার কর্মীকে ছুটিতে রাখা থেকে বিরত করেছেন এবং আরও ৫০০ জনকে পুনর্বহাল করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প ও মাস্ক এমন এক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন, যেখানে ইউএসএআইডির কর্মী বাহিনী ও ঠিকাদারের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে কমিয়ে ৬০০-তে নামিয়ে আনতে চায়।

এ সিদ্ধান্তের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তার কাজে বড় ধরনের বিঘ্ন তৈরি হয়েছে। সিংহভাগ কর্মসূচি রাতারাতি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কর্মীদের ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য ও ওষুধ গুদামে আটকে গেছে। রোগী এবং অন্যান্য সহায়তাভোগীর সেবা পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সেবা পাওয়া মানুষের মধ্যে ইউক্রেন, জর্ডান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা মানুষগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যদিও আমরা ক্ষতির পূর্ণ চিত্রটা পাচ্ছি না কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যৌনস্বাস্থ্য ও এইচআইভি–সেবা কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো, এমন ৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ ডলার মূল্যের খাদ্যসহায়তা আটকে গেছে।

ইউএসএআইডির সামগ্রিক অবদান বিশাল। এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা পরিচালনাকারী সংস্থা এটি। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মোট মানবিক সহায়তার ৪২ শতাংশের জোগান দিয়েছিল। ৬৮ বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের জোগান দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে বৈদেশিক সহায়তা দেয়, সেটা দেশটির ফেডারেল বাজেটের ১ শতাংশের কম। ফলে এ খাতে কাটছাঁট করা হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি রকমফের হবে না। কিন্তু এই অর্থের ওপর নির্ভরশীল কর্মসূচিগুলো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করা হলে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য কী লাভ নিয়ে আসতে পারবে? যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের আমলে এই প্রশ্নটি সামনে আসে এবং উত্তরটা অস্পষ্ট। বৈদেশিক সহায়তা অস্থিতিশীলতা, সংঘাত এবং চরম দারিদ্র্যকে কমিয়ে দিতে পারে। গণবাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণ এগুলো। বিশ্বের আরও বেশি অঞ্চলকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখার জন্য কর্মসূচিগুলোকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে নিপীড়ন, চরম দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে পালাতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা।

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে যখন বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে, তখন বৈদেশিক সহায়তা কাটছাঁট করা হলে এ ক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। বৈদেশিক সহায়তা একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায়। নতুন বাজার ও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। ভারতের মতো দেশের কথা চিন্তা করুন। তারা একটি সজীব ও ক্রমবিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অসংক্রামক রোগের মহামারির বিস্তার রোধসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈদেশিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৪ সালের পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা চিন্তা করুন। লাইবেরিয়া, গিনি ও সিয়েরা লিওনকে ইবোলার বিস্তার রোধে যে সংগ্রাম করতে হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সহায়তা না দিলে সেটা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। 

ইবোলার বৈশ্বিক বিস্তার ঠেকাতে পশ্চিম আফ্রিকাকে এই সমর্থন দেওয়াটা জরুরি ছিল। এ ছাড়া যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেয়, সেসব দেশে গুরুত্বপূর্ণ সফট পাওয়ার ও প্রভাব তৈরি করতে পারে তারা। রাশিয়া ও চীন এ থেকে শিক্ষা নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র চলে আসায় যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেখানে চীন ও রাশিয়া ঢুকে পড়বে।

সম্ভবত অনেকে এখন ভাবছেন, অন্য দেশে সহায়তা দেওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তার দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। সাম্প্রতিক একটা সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তার সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় খারাপ করছে না, কিন্তু স্বাস্থ্য, সুখ ও সামাজিক বিশ্বাসের মতো মাপকাঠিতে পিছিয়ে আছে। সমীক্ষার লেখকেরা আমেরিকানদের বলেছেন, ‘সম্পদশালী কিন্তু অসুখী’।

অধ্যাপক দেবী শ্রীধর এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের চেয়ার

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র

এছাড়াও পড়ুন:

ডলার ও বিদেশিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ

হঠাৎ করে দেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশিরাও দেশের ব্যাংকগুলোতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রার যে হিসাব আছে, সেটিও বাড়ছে অন্যান্য আমানত হিসাবের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় রক্ষিত আমানত বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও বিদেশি মুদ্রার বাইরে দেশীয় মুদ্রার আমানত হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব হিসাবে অর্থ জমা বেশি বেড়েছে। এর ফলে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এটা শুরু হয়েছে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব ও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কারণে।

আমানত কতটা বাড়ল

দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশিদের জন্য পৃথক আমানত পণ্য। বিদেশি মুদ্রার জন্য রয়েছে পৃথক আমানত পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশিরা সাধারণত বিদেশি মুদ্রাকে টাকায় রূপান্তর করে এই ধরনের হিসাব পরিচালনা করেন, ব্যাংকের ভাষায় এসব হিসাবকে কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট অব ফরেনার্স বা বিদেশিদের জন্য টাকায় রূপান্তরযোগ্য হিসাব বলা হয়। ২০২৪ সালের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবেও (এফসিএ) জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই সাধারণ এফসিএ হিসাব খুলে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের হিসাব খুলতে পারেন।

এ ছাড়া শুধু প্রবাসীদের জন্য আলাদা আমানত হিসাবও রয়েছে, তাতে স্থিতি খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীদের আমানত হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (আরএফসিডি) আমানতও বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে আমানত ছিল ২৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত সেভাবে বাড়েনি। ২০২৪ সালের মার্চে পুরো খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।

কেন বাড়ছে ডলার ও বিদেশিদের জমা অর্থ

দেশে ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের হিসাব খুলতে শুরু করে। বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি এবং দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।

সুদ বৃদ্ধিসহ ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে ঘরে থাকা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসব হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ওপর সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়া যায়। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়া ও খরচের সুবিধা পেতেন।

এদিকে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের জন্য। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের নামে খোলা বৈদেশিক হিসাবের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন শুধু অনুমোদিত চারটি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন। কিন্তু এখন অনুমোদিত মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য সব বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারছেন প্রবাসীরা।

এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত ও বসবাস করছেন, তাঁদের যে টাকার হিসাব রয়েছে, তাতেও আমানত বেড়েছে। এ ধরনের হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেশ কমে যায়, তবে ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে যায়। আর গত মার্চ শেষে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে বড় পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে বিদেশিরা সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে ও এই ধরনের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায়, এ ছাড়া রয়েছে নানা সুবিধা। যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁরাও এখন নিজ নিজ হিসাবে ডলার জমা রাখছেন। এতে মুদ্রার মান কমলেও কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগকারীরা দেশে আসছেন। এই কারণে বিদেশিদের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ, অন্য আমানতে যখন এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তখন ডলার হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ