কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের শেষ প্রান্ত পেরোলে একটি বড় মাঠ। মাঠ পেরোলেই ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রাম। দুই জেলার এই দুই গ্রামের মধ্যবর্তী প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে মাঠ। এই মাঠেই গতকাল শুক্রবার রাতে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁদের দুজনের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায়। আরেকজনের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরে।

শনিবার দুপুরে রামচন্দ্রপুর গ্রামে যেতে বাঁ পাশে বড় একটি খাল দেখা যায়। মাঠের ভেতর দিয়ে সড়ক ভেদ করে ডান দিকে আরেকটি খাল চলে গেছে। মূল সড়ক থেকে ডানে নামতে গভীর ঢাল। অন্তত ১০০ হাত দূরে দুটি স্থানে ঘাসের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। দুটি স্থানের দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ ফুট। সেখান থেকে ২০ হাত দূরে খালের সামান্য পানিতে লাগানো ধানগাছ ভাঙা দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন বললেন, একটি লাশ খালের এই পানির মধ্যে পড়ে ছিল।

ঘটনাস্থলে স্থানীয় ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। সেখানে এক পর্যায়ে পুলিশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন ব্যক্তিও হাজির হন। তাঁরাও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে স্থানীয়দের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়। কেউই নাম প্রকাশ করতে চাইলেন না। কয়েকজন বললেন, শুক্রবার ঠিক ৯টার দিকে তাঁরা মাঠের মধ্যে তিন থেকে চারটি বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। তবে কেউই সাহস করে মাঠের দিকে সড়কে যাননি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর এই মাঠের খালের ধারে পাঁচজনকে হত্যা করে চরমপন্থীরা। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে দুজনকে হত্যা করা হয়েছিল। আর একজনকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল। তাঁর মাথা পড়েছিল অন্য স্থানে। এসব ঘটনার কারণে ওই সড়কে মানুষজন খুবই আতঙ্কে চলাচল করেন। বিকেলের পর নিতান্তই বিপদ ছাড়া কেউ ওই সড়কে যান না।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মাঠের মধ্যে ওই স্থানটি খুবই ভয়ংকর। দিনের বেলায় চলতেও তাঁরা ভয় পান। স্থানীয় এক কৃষক জানালেন, গত ২২ বছরে ওই এলাকায় অন্তত আটজনকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, শুক্রবার রাত আটটার দিকে তিনি পিয়ারপুর বাজারে থাকতে জানতে পারেন, রামচন্দ্রপুর গ্রামে যাওয়ার ওই সড়কে যাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে নাকি অস্ত্র নিয়ে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। কাউকে যেতে দিচ্ছে না। এর ঠিক এক ঘণ্টা পর তিনটা গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। রাত হওয়ায় তিনি বাড়িতে চলে যান। কী হয়েছে তা জানতেও চাননি, দেখতেও যাননি।

আরেক ব্যক্তি দাবি করেন, তাঁর বাড়ি রামচন্দ্রপুর গ্রামে। তাঁর এক আত্মীয় রাত সাড়ে আটটার দিকে পিয়ারপুর যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সড়কে মাঠের মধ্যে লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল বলে প্রবেশপথেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য তিনি আর যাননি।

দায় স্বীকারের বার্তা নিয়ে ধোঁয়াশা

ঘটনার পরপরই ঝিনাইদহে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কালু জাসদ গণবাহিনী।’ তবে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এই বার্তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনি ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ঘটনা অন্যদিকে মোড় দিতে হয়তো বার্তা পাঠানো হয়েছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালুর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আবদালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আবদালপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এলাকায় থাকেন না। চরমপন্থী সংগঠনের শীর্ষ নেতা। তাঁর একটা নিজস্ব বাহিনী আছে। দীর্ঘদিন ভারতে আছেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন বলেও জনশ্রুতি আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কজন ব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।

লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।

সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।

সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোবাইল চুরির সন্দেহে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩
  • পাবনায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা
  • বগুড়ায় মেয়ে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
  • লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
  • র‌্যাব পরিচয়ে উত্তরায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ছিনতাই