ঘরের মাঠে হেরে শিরোপা লড়াইয়ে লিভারপুলকে এগিয়ে দিল আর্সেনাল
Published: 22nd, February 2025 GMT
শেষ তিন ম্যাচে দুটিতে পয়েন্ট হারিয়ে আর্সেনালকে কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছিল লিভারপুল, কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো আর্সেনাল। ঘরের মাঠে লিগ ম্যাচে আজ শনিবার রাতে তারা হেরে গেল ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের কাছে। ১০ জনের আর্সেনাল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও হেরেছে ১-০ গোলে। এ হারে শিরোপা লড়াইয়ের পথে বড় ধাক্কা খেল আর্সেনাল।
এমিরেটসে প্রথমার্ধেই জ্যারড বাওয়েনের গোলে পিছিয়ে পড়ে আর্সেনাল। বিরতির পর অবশ্য ম্যাচে ফিরতে মরিয়া চেষ্টা করে তারা, কিন্তু যা মিলেছে তা শুধুই হতাশা। উল্টো ৭৩ মিনিটে মাইলেস লুইস-স্কেলি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায় স্বাগতিকদের জন্য। ১০ জন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেনি মিকেল আরতেতার দল। মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হতাশাজনক এক হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের।
এ ম্যাচ জিতলে লিভারপুলের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধানটা পাঁচে নামিয়ে আনতে পারত আর্সেনাল। সেটি না হওয়ায় এখন ব্যবধান আটই থাকল। এমনকি আগামীকাল ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে লিভারপুল জিতলে
এ ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াবে ১১। বর্তমানে ২৬ ম্যাচে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের পয়েন্ট ৬১। সমান ম্যাচে আর্সেনালের পয়েন্ট ৫৩। আর এ ম্যাচে জিতে চমক দেওয়া ওয়েস্ট হামের পয়েন্ট ২৬ ম্যাচে ৩০। তারা আছে ১৬ নম্বরে।
ঘরের মাঠে শুরু থেকে বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও একেবারে স্বস্তিতে ছিল না আর্সেনাল। ওয়েস্ট হামের জমাট রক্ষণ ও সতর্ক অবস্থানের কারণে খুব একটা ফাঁকা জায়গাও পায়নি তারা। যে কারণে নিশ্চিত সুযোগও সেভাবে তৈরি করতে পারেনি স্বাগতিকেরা।
বিপরীতে ৫ জনের রক্ষণদেয়াল তৈরি করা ওয়েস্ট হাম চেষ্টা করছিল সুযোগ পেলে প্রতি-আক্রমণে যাওয়ার। ওয়েস্ট হামের সংগঠিত ও কৌশলী ফুটবলের কারণে বারবার হতাশ হতে হয়েছে আর্সেনালকে। সে হতাশা দ্বিগুণ হয়েছে প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোল খেয়ে বসলে। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে বাওয়েনের গোলে অপ্রত্যাশিতভাবে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট হাম। এ গোলের কারণে পিছিয়ে থাকার যন্ত্রণা নিয়েই বিরতিতে যেতে হয় আর্সেনালকে।
বিরতির পর সমতায় ফিরতে আগ্রাসী ফুটবল খেলার চেষ্টা করে আর্সেনাল। গানারদের অলআউট ফুটবলের সুযোগ নিয়ে ওয়েস্ট হাম চেষ্টা করছিল প্রতি-আক্রমণে যাওয়ার। তেমনই এক আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে গোল করার মতো অবস্থায় থাকা ওয়েস্ট হাম মিডফিল্ডার মোহাম্মদ কুদুসকে ফেলে দেন আর্সেনালের লুইস-স্কেলি। প্রথমে হলুদ কার্ড দেখালেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ম্যাচের বাকি সময় একজন কম নিয়ে জোর চেষ্টা করেছে আর্সেনাল, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলটি আর আসেনি। মাঠ ছাড়তে হয় হার নিয়েই।
এর আগে রাতের অন্য ম্যাচে দুই গোলে পিছিয়ে গিয়েও কোনোরকমে ২-২-এ ড্র করে মাঠ ছেড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এদিন ৩৩ মিনিটের মধ্যে বেতো ও আবদোলাই দুকুরের গোলে এগিয়ে যায় এভারটন। দুই গোলে পিছিয়ে যাওয়া ইউনাইটেডের আরেকটি হার মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার, কিন্তু তখনই দারুণভাবে ফিরে আসে রোবেন আমোরিমের দল।
৭২ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও ৮০ মিনিটে ম্যানুয়েল উগার্তে গোল করে সমতায় ফেরান ইউনাইটেডকে। ফলে হারতে থাকা ম্যাচে কোনোরকমে ড্র করে মাঠ ছাড়ে ‘রেড ডেভিল’রা। এ ড্রয়ে ২৬ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫ নম্বরেই থাকল ইউনাইটেড। সমান ম্যাচে ১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে ১৪ নম্বরে এভারটন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর স ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।