মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র তথা আইসিইউ লইয়া দেশে যাহা চলিতেছে তাহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ব্যতীত আইসিইউ বরাদ্দ মিলিতেছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগিতেছে ঘুষও। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হইতেছে রোগী ও স্বজনের পকেট। উপরন্তু, সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসিতেছে না। এক কথায় আইসিইউ লইয়া দেশের চিকিৎসা খাতে এক নৈরাজ্য চলিতেছে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, দেশে আইসিইউর শয্যা আছে সর্বমোট প্রায় বারো শত, যাহার ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। উপরন্তু, ৩৪ জেলায় কোনো আইসিইউ নাই। তৈলাক্ত মস্তকে তৈল মর্দন সম্ভবত ইহাকেই বলে। ঢাকায় যেহেতু সরকারের শীর্ষ ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ থাকেন, পাশাপাশি আছেন দেশের সর্বাধিক অর্থবিত্তসম্পন্ন মানুষেরা, ওই কথাটি নিশ্চয় সচেতন কাহারও নিকট অপ্রাসঙ্গিক ঠেকিবে না। অন্যদিকে ঢাকাকেন্দ্রিক অতি জরুরি চিকিৎসার এই আয়োজনের কারণে সমগ্র দেশের মানুষকে ছুটিয়া আসিতে হয় রাজধানীর দিকে, যাহার ভোগান্তি ভুক্তভোগী তো বটেই, ন্যূনতম মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষেরও টের পাইবার কথা। অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক হইল, ঢাকা মহানগরে ৮২৬টির মধ্যে ৩৮৪টি সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৪৪২টি বেসরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ আইসিইউ লইয়া রমরমা বাণিজ্যের বিষয়টিও একেবারে স্পষ্ট। সকলেরই জানা থাকিবার কথা, সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য পৃথক খরচ দিতে হয় না। অন্যদিকে রাজধানীর মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দৈনিক আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১৫ সহস্র টাকা। চিকিৎসক ফি, ঔষধের দাম এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যুক্ত হইয়া দিনে স্বাভাবিক খরচ দাঁড়ায় ৩০ হইতে ৩৫ সহস্র টাকা। রোগীর অবস্থা জটিল হইলে এই খরচ লক্ষ টাকাও ছাড়াইয়া যায়। অধিকন্তু, যেই হাসপাতাল যত নামি, তাহার আইসিইউর খরচও ততধিক, যাহা খুব কম রোগীর পরিবারই বহন করিতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত খরচের নিচে চাপা পড়িয়া অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা গুটাইয়া লইতে বাধ্য হইয়াছেন, এমন নজিরও কম নাই। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কখনও কখনও রোগীর মৃত্যু ঘটিবার পরও তাহা স্বজনকে না জানাইয়া আইসিইউতে রাখিয়া ‘বিল বাণিজ্য’ করিবার অভিযোগও রহিয়াছে।
আমরা জানি, ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাইতে বিশেষত বিগত করোনাকালে তৎকালীন সরকার প্রতি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। সেই প্রকল্পের অধীনে ২৭ জেলায় স্থাপনও করা হয় আইসিইউ ইউনিট। সেইগুলির মধ্যে ১৮টিই সচল করা যায় নাই। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হইয়াছে গত ডিসেম্বরে। এহেন জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার কারণে প্রকল্প হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বলা হইয়াছে, করোনার পর এই সকল ইউনিট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ডেপুটেশনে চলিয়া যায়। কিন্তু নূতন করিয়া জনবল সৃষ্টির কার্যক্রমও দৃশ্যমান নহে। অনস্বীকার্য, যেখানে সমগ্র চিকিৎসাব্যবস্থায় পরিকল্পনাহীনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতিফলন স্পষ্ট সেইখানে আইসিইউ স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হইবার কথা নহে। বিষয়টির সহিত বিগত কয়েক দশক যাবৎ চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থার ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণের সম্পর্ক আছে বলিয়া আমরা মনে করি। অন্য সকল মৌলিক অধিকারের ন্যায় বিগত সরকারসমূহের জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে অবহেলাও এই ক্ষেত্রে দায়ী বলিয়া বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে।
জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলিতেছেন, এইভাবে চলিতে থাকিলে পরিস্থিতি অচিরেই আরও জটিল রূপ লইতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্তত অচল আইসিইউ সচল করিবার বিষয়ে তাহারা তৎপর হইতে পারে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নটি এই ক্ষেত্রে উঠিতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে যেই সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অচল আইসিইউ সচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা যাইতেছে না বলিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, উহার প্রতি মনোযোগ দিতে তো আর অর্থের প্রয়োজন নাই। 
  
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব সরক র প রকল প হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
ইসরায়েলি পুলিশ দেশটির সেনাবাহিনীর সাবেক একজন প্রসিকিউটরকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর ইসরায়েলি সেনাদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ওই সাবেক প্রসিকিউটরের নাম ইয়াফাত তোমের-ইয়েরুশালমি। গতকাল সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী।
জানা যায়, অনলাইনে ওই ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তখন তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর নিখোঁজ ছিলেন।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈন্যরা এক বন্দীকে আলাদা স্থানে নিয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুর রয়েছে। তাঁরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেদের কার্যকলাপ এমনভাবে আড়াল করে রেখেছেন, যাতে কেউ দেখতে না পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভিডিও ফাঁসের ঘটনাকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘জনসংযোগের ওপর সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস ঘিরে ইসরায়েলের শীর্ষ আইনি কর্মকর্তার পদত্যাগ০১ নভেম্বর ২০২৫অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে আল-জাজিরার নউর ওদেহ বলেন, ওই নারী প্রসিকিউটরের আটকের ঘটনা ইসরায়েলে ‘রাজনৈতিক ও আইনি ঝড়’ তৈরি করেছে। তবে আটক হওয়া ব্যক্তির ওপর বাড়তি মনোযোগ মূল ঘটনা থেকে নজর সরিয়ে দিচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারগুলোয় অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন‘স্বপ্ন ছিল বুকে জড়িয়ে ধরার, এখন আশা দাফনটা যদি অন্তত করতে পারি’২ ঘণ্টা আগে