Samakal:
2025-11-04@05:48:16 GMT

অচল আইসিইউ সচলে মনোযোগ দিন

Published: 22nd, February 2025 GMT

অচল আইসিইউ সচলে মনোযোগ দিন

মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র তথা আইসিইউ লইয়া দেশে যাহা চলিতেছে তাহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ব্যতীত আইসিইউ বরাদ্দ মিলিতেছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগিতেছে ঘুষও। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হইতেছে রোগী ও স্বজনের পকেট। উপরন্তু, সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসিতেছে না। এক কথায় আইসিইউ লইয়া দেশের চিকিৎসা খাতে এক নৈরাজ্য চলিতেছে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, দেশে আইসিইউর শয্যা আছে সর্বমোট প্রায় বারো শত, যাহার ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। উপরন্তু, ৩৪ জেলায় কোনো আইসিইউ নাই। তৈলাক্ত মস্তকে তৈল মর্দন সম্ভবত ইহাকেই বলে। ঢাকায় যেহেতু সরকারের শীর্ষ ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ থাকেন, পাশাপাশি আছেন দেশের সর্বাধিক অর্থবিত্তসম্পন্ন মানুষেরা, ওই কথাটি নিশ্চয় সচেতন কাহারও নিকট অপ্রাসঙ্গিক ঠেকিবে না। অন্যদিকে ঢাকাকেন্দ্রিক অতি জরুরি চিকিৎসার এই আয়োজনের কারণে সমগ্র দেশের মানুষকে ছুটিয়া আসিতে হয় রাজধানীর দিকে, যাহার ভোগান্তি ভুক্তভোগী তো বটেই, ন্যূনতম মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষেরও টের পাইবার কথা। অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক হইল, ঢাকা মহানগরে ৮২৬টির মধ্যে ৩৮৪টি সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৪৪২টি বেসরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ আইসিইউ লইয়া রমরমা বাণিজ্যের বিষয়টিও একেবারে স্পষ্ট। সকলেরই জানা থাকিবার কথা, সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য পৃথক খরচ দিতে হয় না। অন্যদিকে রাজধানীর মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দৈনিক আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১৫ সহস্র টাকা। চিকিৎসক ফি, ঔষধের দাম এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ যুক্ত হইয়া দিনে স্বাভাবিক খরচ দাঁড়ায় ৩০ হইতে ৩৫ সহস্র টাকা। রোগীর অবস্থা জটিল হইলে এই খরচ লক্ষ টাকাও ছাড়াইয়া যায়। অধিকন্তু, যেই হাসপাতাল যত নামি, তাহার আইসিইউর খরচও ততধিক, যাহা খুব কম রোগীর পরিবারই বহন করিতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত খরচের নিচে চাপা পড়িয়া অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা গুটাইয়া লইতে বাধ্য হইয়াছেন, এমন নজিরও কম নাই। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কখনও কখনও রোগীর মৃত্যু ঘটিবার পরও তাহা স্বজনকে না জানাইয়া আইসিইউতে রাখিয়া ‘বিল বাণিজ্য’ করিবার অভিযোগও রহিয়াছে। 

আমরা জানি, ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাইতে বিশেষত বিগত করোনাকালে তৎকালীন সরকার প্রতি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। সেই প্রকল্পের অধীনে ২৭ জেলায় স্থাপনও করা হয় আইসিইউ ইউনিট। সেইগুলির মধ্যে ১৮টিই সচল করা যায় নাই। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হইয়াছে গত ডিসেম্বরে। এহেন জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার কারণে প্রকল্প হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বলা হইয়াছে, করোনার পর এই সকল ইউনিট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ডেপুটেশনে চলিয়া যায়। কিন্তু নূতন করিয়া জনবল সৃষ্টির কার্যক্রমও দৃশ্যমান নহে। অনস্বীকার্য, যেখানে সমগ্র চিকিৎসাব্যবস্থায় পরিকল্পনাহীনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতিফলন স্পষ্ট সেইখানে আইসিইউ স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হইবার কথা নহে। বিষয়টির সহিত বিগত কয়েক দশক যাবৎ চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থার ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণের সম্পর্ক আছে বলিয়া আমরা মনে করি। অন্য সকল মৌলিক অধিকারের ন্যায় বিগত সরকারসমূহের জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে অবহেলাও এই ক্ষেত্রে দায়ী বলিয়া বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলিতেছেন, এইভাবে চলিতে থাকিলে পরিস্থিতি অচিরেই আরও জটিল রূপ লইতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্তত অচল আইসিইউ সচল করিবার বিষয়ে তাহারা তৎপর হইতে পারে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নটি এই ক্ষেত্রে উঠিতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে যেই সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অচল আইসিইউ সচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা যাইতেছে না বলিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, উহার প্রতি মনোযোগ দিতে তো আর অর্থের প্রয়োজন নাই। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব সরক র প রকল প হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরের ছয়টি আসনের ৪টিতে বিএনপির প্রার্থী হলেন যারা

গাজীপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-৬ আসনের প্রার্থীদের নাম পরে জানানো হবে। 

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি ঢাকা-২০ আসনে, অপেক্ষায় ৪ নেতা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিজ্ঞদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি

গাজীপুর-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে এম. মঞ্জুরুল করিম রনি। গাজীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। গাজীপুর-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান এবং গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়া, শরিক দলের জন্য কিছু আসন খালি রাখা হয়েছে।”

এর আগে, দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সেই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে আনুষ্ঠানিক তফসিল।

এদিকে প্রার্থী ঘোষণার খবর পেয়ে গাজীপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তবে গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন তানিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন।

ঢাকা/রফিক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ