‘আমার সবকিছু শেষ, এখন আমার কী হবে’
Published: 23rd, February 2025 GMT
‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ওরা আমার স্বামী আর ভাইকে এভাবে মেরে ফেলল! এখন আমার কী হবে?’ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত একসময়ের চরমপন্থী নেতা হানেফ আলীর স্ত্রী শান্তি বেগম। তাঁর ভাষ্যে, হানেফ আলী মাঠের কাজ ও মাছ চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কোনো খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন না। তারপরও তাঁকে হত্যা করা হলো।
আজ রোববার সকালে স্বামীর শোকে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন শান্তি বেগম। স্বজনেরা তাঁকে দ্রুত ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
এর আগে শুক্রবার রাতে শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠের মধ্যে খালের ধারে গুলিতে নিহত হন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের বাসিন্দা হানেফ আলী (৫৬), তাঁর শ্যালক একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের উম্মাদ হোসেনের ছেলে লিটন হোসেন (৩৫) এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের আরজান হোসেনের ছেলে রাইসুল ইসলাম (২৫)। চরমপন্থী দল জাসদ গণবাহিনী বার্তা পাঠিয়ে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
হানেফ আলী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। তিনি একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা পেয়ে মুক্তি পান। পরে মৎস্যজীবী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। শনিবার রাত আটটার দিকে নিহত হানেফ আলীর লাশ মর্গ থেকে বাড়িতে পৌঁছায়। এরপর রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।
আজ সকালে হানেফ আলীর বাড়িতে গিয়ে বাইরে একটি খাটিয়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েকজন নারী কথা বলছেন। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, বিপদের ওপর বিপদ। হানেফ আলীর মারা যাওয়ার শোকে তাঁর স্ত্রী শান্তি বেগম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছেন। বাড়ির ভেতর কেউ নেই।
হানেফ আলীর বড় ভাবি সুজাতারা বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শান্তি বেগম কিছুই মুখে দেননি। নানা চিন্তা করেছেন। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করেছেন। এ জন্য তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
পরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নারী ওয়ার্ডের একটি শয্যায় শান্তি বেগম শুয়ে আছেন। তাঁর শরীরে স্যালাইন চলছে। শান্তি বেগমের বিছানা ঘিরে রেখেছেন আরও কয়েকজন নারী। কাছে কেউ গেলেই কান্নাকাটি শুরু করছেন আর বলছেন, ‘আমার স্বামী, আমার ভাইকে এভাবে কেন খুন করল?’
এ সময় হানেফ আলীর একমাত্র ছেলে মজনুর রহমান মায়ের পাশে ছিলেন। বিছানার পাশে থাকা নারীরা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শান্তি বেগমকে কথা বলতে দিতে চাইছিলেন না। তাঁরা বলেন, ‘আমরা ঝামেলায় আছি, আপনারা এখন চলে যান।’
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আলামিন বলেন, ওই নারীর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা মনে হচ্ছে। তা ছাড়া মানসিক চাপে আছেন। যে কারণে শরীর খারাপ হয়েছে। তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। প্রতিবেদন দেখে বোঝা যাবে, আসলে সমস্যা কী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ন ফ আল র উপজ ল র আম র স
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে এটিএম বুথে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত পলাতক
গাজীপুরের শ্রীপুরে অধিক বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে ওই নারী শ্রমিকের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
রবিবার (১৫ জুন) সকালে শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের এমসি বাজার এলাকায় তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ।
ভুক্তভোগী নারী স্থানীয় একটি কারখানায় ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. লিটন (৩৫) তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন বুথে দায়িত্ব পালন করতেন।
লিটন ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার ডুবাইল গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের ছেলে। বর্তমানে তিনি মুলাইদ গ্রামের আতাব উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন এবং ফাস্ট সলিউশন লিমিটেড নামের একটি নিরাপত্তা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে চাকরি করতেন।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, এটিএম বুথে টাকা তোলার সূত্র ধরে এই নারী শ্রমিকের সঙ্গে পরিচয় হয় লিটনের। একপর্যায়ে লিটন ভুক্তভোগীকে ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রবিবার সকালে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ডেকে আনেন। সকাল ৬টার দিকে বুথে গেলে লিটন তাকে ভেতরে একটি ছোট কক্ষে বসিয়ে রাখেন এবং জানান যে, নতুন চাকরির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে তার সাক্ষাৎকার নেবেন।
ভিকটিমের বাবা দুইবার মেয়ে চাকরির বিষয়ে খোঁজ নিলে লিটন জানান, চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। এরপর আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে লিটন কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি ফেরার পথে মেয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়।
ঘটনার বিষয়ে ফাস্ট সলিউশন লিমিটেডের সুপারভাইজার মো. হানিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারিক জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্ত লিটন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দ্রুতই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা/রফিক/টিপু