এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল কোম্পানির মালিকানা বদল হচ্ছে– এমন গুজব ছড়িয়ে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়াচ্ছে পুরোনো একটি কারসাজি চক্র। গত পাঁচ দিন সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে শেয়ারটি কেনাবেচা হয়েছে। মাত্র ছয় কর্মদিবসে শেয়ারটির দর ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। যতই শেয়ারটির দর বাড়ছে, ক্রয় আদেশের তুলনায় শেয়ার কেনাবেচা ততই কমছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারিও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের শেয়ার সর্বনিম্ন ৯ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। গতকাল রোববার এ শেয়ারই ১৬ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১১ লাখ শেয়ার কেনাবেচা হলেও গতকাল তা ছিল ৯০ হাজারেরও কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘মালিকানা বদল হবে’– এমন গুজব ছড়িয়ে এটিসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হচ্ছে। এটা কারসাজি ভিন্ন অন্য কিছু নয়।

শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এই দরবৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে আলোচিত শেয়ার কারসাজির হোতা আবুল খায়ের হিরো। আগের মতো নিজের অ্যাকাউন্টে নয়, প্রভাবশালী পরিবারের কয়েকজনসহ বহু সংখ্যক অনুসারীর মাধ্যমে শেয়ার কারসাজির নতুন কৌশল রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আবুল খায়ের হিরোকে ফোন করা হলেও, সাড়া দেননি তিনি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট সব কোম্পানি সংকটাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। এর মধ্যে এ কোম্পানির টানা অস্বাভাবিক হারে শেয়ার দরবৃদ্ধি বেশ আলোচনার ঝড় তুলেছে শেয়ারবাজারে। এ দর বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে তথ্য চাইলে কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কোনো কারণ তাদের জানা নেই।
উৎপাদন বন্ধ এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কোম্পানির সম্পত্তি নিলামে তোলা হচ্ছে– বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর বিষয়ে ডিএসই জানতে চাইলে গত ৩০ ডিসেম্বর কোম্পানিটি জানায়, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এলসি খোলার নিষেধাজ্ঞার ফলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ও কাঁচামালের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। যার কারণে উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে তারা। অনাদায়ী ঋণ আদায়ে সম্পত্তি নিলামে তোলার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে অপর একটি চিঠিতে কোম্পানিটি গত ৮ জানুয়ারি জানায়, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে, যা দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।

এদিকে গতকাল এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল ছাড়াও আরও চার কোম্পানির শেয়ার দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হয়েছে। এগুলো হলো– বারাকা পাওয়ার, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, পদ্মা লাইফ এবং সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র এস আলম

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ