কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল রোববার চিলমারী মডেল থানায় মামলাটি করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এ ছাড়া নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক)–এর ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানারও অভিযোগ করা হয়েছে।

নাহিদ হাসান (নলেজ) চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।মামলার বাদী গোলাম মোস্তফার বাড়ি উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ছোটকুষ্টারি গ্রামে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি রাখাল রাহাকে নিয়ে তৌহিদী মুসলিম জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন নাহিদ হাসান। সেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)–কে অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে তৌহিদী মুসলিম জনতার পক্ষে অভিযোগ তোলা হলে তিনি পোস্টটি ডিলিট করেন।

এদিকে নাহিদ হাসান তাঁর ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নিলেও তৌহিদী মুসলিম জনতার ব্যানারে দুই দিন ধরে চিলমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জনসমাবেশ হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নিয়েছেন। গতকাল চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে নাহিদ হাসানকে আজ সোমবার বেলা দুইটার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে নাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ফেসবুকে এক পোস্টে নাহিদ হাসান নিজেকে ‘বিশ্বাসী মুসলিম’ দাবি করে লিখেছেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আল্লাহ ও প্রিয় রাসুলের বিরুদ্ধে কোথাও কিছু লিখেছি—এটা কেউ দেখাতে পারবে না। এমন কিছু কখনো বলিনি, লিখিনি, তাই কেউ দেখাতেও পারবে না। গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা, প্রিয় মাতৃভূমিকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া একটি পক্ষের আইন হাতে তুলে নিতে চাওয়ার বিপক্ষে আমি মত দিয়েছি। এটা কি অপরাধ হতে পারে? তবু সেই পোস্ট আমি ডিলিট করেছি।’

চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাহেদ খান আজ সকালে বলেন, ‘নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা ডিজিটাল ও অ্যানালগ—দুই পদ্ধতিতে নাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি, তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে তুলে দিতে পারব।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ