ইলন মাস্কের স্টারলিংক নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি
Published: 24th, February 2025 GMT
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তি ইলন মাস্কের স্টারলিংকের বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী।
আজ সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজাইজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এ কথা বলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘ডিজিটাল রূপান্তর এবং এমএসএমই বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্ককে পাঠানো আনুষ্ঠানিক চিঠিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবার উপযোগিতার বিষয়টি তোলেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ এবং আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো.
নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে
নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে মনে করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী। তিনি আরও বলেন, সমন্বয়ের অভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। বিটিআরসিকে প্রথমে স্বাধীন সংস্থা করা হলেও পরে আইন সংশোধন করে বলা হলো যে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের (মন্ত্রণালয়ের) পূর্বানুমতি লাগবে; অর্থাৎ স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেই সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কঠিন হচ্ছে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশে ইন্টারনেটের খরচ অনেক বেশি। কারণ, ইন্টারনেট ব্যয়ের বেশির ভাগই চলে যায় সরকারকে কর দিতে গিয়ে। ফলে সরকার করহার না কমালে ইন্টারনেটের দাম কমবে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়বে না।
অন্য আলোচনা
এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাসরুর ও বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন। তাঁরা দুজনেই অর্থনীতির কৌশল পুনর্নির্ধারণ–সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য।
ফাহিম মাসরুর বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কম। এর পেছনে তিনটি প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যবহারকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা, সরবরাহ শৃঙ্খলে অধিক ধাপ এবং ডেটা পরিবহনের উচ্চ ব্যয়।
অন্যদিকে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য একটি আলাদা এসএমই ব্যাংক করার পরামর্শ দিয়েছেন মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, এসএমই নীতিমালায় আলাদা এসএমই ব্যাংকের কথা বলা থাকলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এসএমই বিভাগ থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি এসএমই–বান্ধব নয়। অথচ দেশে এসএমই খাতের পরিসর বাড়ছেই। এমন বাস্তবতায় আলাদা একটি এসএমই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, শেয়ারট্রিপের প্রধান নির্বাহী সাদিয়া হক প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক এসএমই ব ব ট আরস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক
২০২৪ সালে মুনাফার রেকর্ড গড়েছে বেসরকারি খাতের দেশীয় মালিকানাধীন ব্র্যাক ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটি এককভাবে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাসহ হিসাব করলে ব্যাংকটির সমন্বিত মুনাফা দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।
আজ মঙ্গলবার ব্র্যাক ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের ইতিহাসে একক কোনো বছরে এটিই রেকর্ড মুনাফা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি এককভাবে মুনাফা করেছিল ৭৩০ কোটি টাকা। সেবার সমন্বিত মুনাফা ছিল ৮২৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের একক মুনাফা বেড়েছে ৪৮৪ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ। আর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সমন্বিত মুনাফা বেড়েছে ৬০৫ কোটি টাকা বা ৭৩ শতাংশ। এক বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফায় এত বেশি প্রবৃদ্ধি আগে কখনো হয়নি।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছর ব্র্যাক ব্যাংক শুধু নিজেরা রেকর্ড মুনাফা করেছে তা নয়, দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসেও এটি সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের রেকর্ড। দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে যেখানে অতীতে কখনো কোনো ব্যাংকের মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সর্বশেষ দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ২০২৩ সালে মুনাফার যে তথ্য রয়েছে তাতে ওই বছরও সর্বোচ্চ মুনাফা করেছিল ব্র্যাক ব্যাংক, সেটি ছিল ৮২৭ কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। তাতে বছর শেষে সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার মুনাফার এই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটি বলছে, গত বছর আমানত ও ঋণে খুব ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল ব্যাংকটির। পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও খুব ভালো ব্যবসা করেছে। এ কারণে মুনাফায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
রেকর্ড মুনাফা করায় সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে ব্যাংকটি। ২০২৪ সালের জন্য ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত এই লভ্যাংশের মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস। এর আগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে নগদ ও বোনাস মিলিয়ে লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০ শতাংশ। সেই হিসাবে গত বছরের জন্য লভ্যাংশের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে।
গতকাল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয়। আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সাধারণ শেয়ারধারীদের অনুমোদনের পর এই লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি নগদ যে লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে শেষ পর্যন্ত এজিএমে সেটি বহাল থাকলে ব্যাংকটি নগদ লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করবে ২২১ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা বোনাস হিসেবে প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে পাবেন সাড়ে ১২টি শেয়ার।
এদিকে রেকর্ড মুনাফার ফলে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসও বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৯৫ পয়সায়। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৩০ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস ২ টাকা ৬৫ পয়সা বা ৬২ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যও বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ১১ পয়সায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৭ টাকা ৬০ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য বা এনএভি বেড়েছে ৬ টাকা ৫১ পয়সা বা ১৭ শতাংশের বেশি।
গত বছর ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহও অনেক বেড়ে গেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬১ টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৭ টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৮৯টি শাখা, ৭৪টি উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১ হাজার ১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৮ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৩ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।