রবিবার এনবিআর-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক-বাজেট বৈঠকে সংবাদপত্রের স্বত্বাধিকারীগণের সংগঠন ‘নোয়াব’ যেই সকল দাবি জানাইয়াছে, সেইগুলির যৌক্তিক সমাধান জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোয়াব নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ হইতে কমাইয়া ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়াছে। ইহার সহিত সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্পরূপে বিবেচনাপূর্বক করপোরেট কর সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপনেরও অনুরোধ করিয়াছে নোয়াব। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ তাহাদের দাবির সপক্ষে যেই সকল যুক্তি উপস্থাপনা করিয়াছেন, সেইগুলিও প্রণিধানযোগ্য। তাহারা যথার্থই বলিয়াছেন, বর্তমানে সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হইলেও এই বাবদ ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এইগুলির সহিত অগ্রিম আয়কর ও পরিবহন বীমা যুক্ত করিলে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুধু কর-শুল্ক বাবদ প্রকৃত ব্যয় প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছে। তদুপরি যুক্ত হইয়াছে নিউজপ্রিন্ট ও ডলারের বর্ধিত দাম। কয়েক বৎসর পূর্বে এক টন নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৬০০ ডলারের কম। এখন তাহা ৭০০ ডলার অতিক্রম করিয়াছে। টাকা-ডলারের বিনিময় হারও পূর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে। সংবাদপত্রের মূল আয় যেই বিজ্ঞাপন, উহার উপরেও কর-ভ্যাট অধিক। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল বৎসরের পর বৎসর আটকাইয়া থাকে। বিবিধ কারণে ব্যক্তি খাতের বিকাশ রুদ্ধ হইবার কারণে এই খাত হইতে বিজ্ঞাপনও হ্রাস পাইয়াছে। এইদিকে এই সংকটসমূহ এমন সময়ে সংবাদপত্র শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করিতেছে যখন বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মাধ্যমের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়াছে; হ্রাস পাইয়াছে সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা।
স্মরণে রাখিতে হইবে, সংবাদপত্র নিছক শিল্প নহে; দেশ ও জাতির প্রয়োজনে নিবেদিত জরুরি সেবাও বটে। এনবিআর চেয়ারম্যান স্বয়ং স্বীকার করিয়াছেন, কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে জনপরিসরে সচেতনতা সৃষ্টির যেই ব্যাপক কার্যক্রম চলিতেছে উহাতে সংবাদপত্র উল্লেখযোগ্য অবদান রাখিতেছে। বহু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দিবসের সূচনায় দেশ-বিদেশের বিবিধ ঘটনা সবিস্তারে মানুষ সংবাদপত্র হইতেই পায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিবিধ ঘটনা সম্পর্কিত বিজ্ঞজনদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্লেষণও সংবাদপত্র তুলিয়া ধরে। সংবাদপত্র সঠিক তথ্য মুদ্রণ করে বলিয়াই রাষ্ট্র বা সরকার ক্ষতিকর গুজব প্রতিরোধ করিতে পারে। সর্বোপরি, রাষ্ট্র ও সমাজের যেই কোনো টেকসই উন্নয়নের বিষয়ও সংবাদপত্র শিল্পের সতেজতার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু বাস্তবে দেশের সংবাদপত্র শিল্প এক প্রকার রুগ্ণ হইয়া পড়িয়াছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল, বিগত সরকার সংবাদপত্রকে সেবা শিল্পের মর্যাদা দিলেও এই শিল্প-সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তাবের প্রতি উহারা কর্ণপাত করে নাই। এই প্রেক্ষাপটে এই শিল্প-সংশ্লিষ্ট সকলের কথা শ্রবণ করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এই কথাও স্মরণে রাখিতে হইবে, যেই গণঅভ্যুত্থান বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পথ সুগম করিয়াছে, মতপ্রকাশ তথা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের দাবিটি সেই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম জ্বালানিস্বরূপ কাজ করিয়াছে। অর্থাৎ অন্তত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের অংশরূপেও সংবাদপত্র শিল্পের যথার্থ বিকাশের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করিতে হইবে। আমরা জানি, সংবাদপত্রের সহিত শুধু সাংবাদিক বা অন্যান্য কর্মীই জড়িত নন; ইহার মুদ্রণ, বিপণন, বিতরণ, বিজ্ঞাপনসহ বহু কাজে অগণিত মানুষ যুক্ত। এই সকল মানুষের পরিবারগুলিও এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। আমাদের বিশ্বাস, আসন্ন বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পের অব্যাহত অগ্রগতি ও মসৃণ পরিচালনার স্বার্থে বিদ্যমান শুল্ক ও কর নীতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হইবে। নোয়াবের অন্য প্রস্তাবগুলি সম্পর্কেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসিবে। একটা বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের নিকট এমনটা আশা করা আদৌ বাহুল্য নহে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব দপত র স ব দপত র শ ল প স ব দপত র র কর য় ছ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।