মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রিসোর্ট, কটেজ, রেস্তোরাঁর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ৩৪টি রিসোর্ট, সাতটি রেস্টুরেন্ট, ১৮টি দোকান ও ৩৬টি বসত ঘর। বর্তমানে সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।   
এদিকে, গতকাল সোমবার সাজেকে যেসব পর্যটক অবস্থান করছিলেন, তারা মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে গন্তব্যে ফিরে গেছেন। পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসন নিরুৎসাহিত করার কারণে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে আজ কেউ ভ্রমণে আসেননি।
সাজেকে ভ্যালির যে অংশে আগুনে লেগেছে, হঠাৎ দেখলেই মনে হবে, যেন এটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোনো নগরী। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনের বাকি অংশ নেভানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন সেখানে। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট লাইন সচলে কাজ করছেন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের কর্মীরা।
আরো পড়ুন:
সাজেকে অগ্নিকাণ্ড: তদন্ত কমিটি গঠন
সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করল প্রশাসন
এলাকাবাসী জানান, আজ সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আগুনে পুড়ে যাওয়া তাদের প্রতিষ্ঠানের পোড়া টিন ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন। এত বড় ক্ষতি কীভাবে সামাল দেবেন সেই চিন্তায় রয়েছে সবার চোখে মুখে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাজেকের অধিকাংশ রিসোর্ট কাঠ ও বাঁশের তৈরি। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাজেক ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিসের কোনো স্টেশন নেই। প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আগুন লাগার তথ্য জানতে পেরে খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রওনা দেন। তবে, পাহাড়ি পথের কারণে তাদের সাজেকে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। এরপর তারা কাজ শুরু করলেও পানি না থাকায় দূর গ্রাম থেকে বারবার পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। পাশাপাশি বাতাসের তীব্রতার কারণেও আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে সবাইকে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে কাজ করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী   
সাজেক কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, “সাজেকে আমাদের মোট ১২৬টি রিসোর্ট-কটেজ, ৬৪টি দোকান ও ২১টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এরমধ্যে পুড়েছে ৩৪টি রিসোর্ট, সাতটি রেস্টুরেন্ট ও ১৮টি দোকান। সে হিসেবে আগুনে পুড়েছে এক তৃতীয়াংশ রিসোর্ট, দোকান ও রেস্টুরেন্ট। বাকিগুলো ঠিক আছে। আমাদের যাদের রিসোর্ট পুড়ে গেছে, তাদের তো এমনিতেই লোকসান, তার ওপর বাকি যাদের ব্যবসা হওয়ার কথা, সেগুলোও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সবাই লোকসানে থাকবে। তাই সাজেকে পর্যটনের কথা চিন্তা করে অন্তত পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসন যে নিরুৎসাহিত করেছে, সেটা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানাই।”
তিনি বলেন, “অনেকেই লেখালেখি করছেন, এখানে নাশকতা থাকতে পারে কিনা, কিন্তু আমরা জানি এখানে কোনো নাশকতা ঘটেনি। এটা একটা দুর্ঘটনা। নাশকতার কোনো হুমকি নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “ভবিষ্যতে আগুন থেকে সাজেকবাসীকে রক্ষা করার জন্য এই পর্যটন কেন্দ্রে একটি ফায়ার স্টেশন এবং পানির রিজার্ভার প্রয়োজন।”
১৬৭ নম্বর রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, “আগুনের ঘটনায় আমার বাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা পুড়ে গেছে।”
শতরঞ্জি ইকো রিসোর্টের মালিক নাইমুল ইসলাম বলেন, “আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আমার রিসোর্ট উদ্বোধনের কথা ছিল। আগুনে পুড়ে আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।”
 
বিজিবি খাগড়াছড়ি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো.                
      
				
বাঘাইছড়ি সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল আমিন বলেন, “ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে পানির রিজার্ভার থাকা প্রয়োজন। পানির রিজার্ভার থাকলে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি আরো কম হতো।”
সাজেক কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চাই থোয়াই চৌধুরী জয় বলেন, “গতকাল রাতে যেসব পর্যটক ছিল, তারা আজ সকালে চলে গেছেন। তাদের কারো কোনো সমস্যা হয়নি।”
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। কটেজ মালিক সমিতি পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহের বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন, যেন সেটা তুলে নেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য মিটিং আহ্বান করেছি।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ভ রমণ র জন য র ঘটন ন শকত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরের ছয়টি আসনের ৪টিতে বিএনপির প্রার্থী হলেন যারা
গাজীপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-৬ আসনের প্রার্থীদের নাম পরে জানানো হবে।
আরো পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি ঢাকা-২০ আসনে, অপেক্ষায় ৪ নেতা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিজ্ঞদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি
গাজীপুর-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে এম. মঞ্জুরুল করিম রনি। গাজীপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। গাজীপুর-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান এবং গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়া, শরিক দলের জন্য কিছু আসন খালি রাখা হয়েছে।”
এর আগে, দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সেই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে আনুষ্ঠানিক তফসিল।
এদিকে প্রার্থী ঘোষণার খবর পেয়ে গাজীপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তবে গাজীপুর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন তানিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন।
ঢাকা/রফিক/মাসুদ