নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করুন, রাজপথ ছেড়ে যাইনি : মামুন মাহমুদ
Published: 25th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করুন। যে গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে রক্ত ঝড়েছে সে রক্তের প্রতি আপনারা শ্রদ্ধা দেখান।
সুতরাং আমরা কিন্তু রাজপথ ছেড়ে যাইনি রাজপথ থেকেই কিন্তু আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে আপনাদেরকে কিন্তু বাধ্য করবো ইনশাল্লাহ। আর আমাদের তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা আপনারা করুন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসরদের বিচারের দাবি, দেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য অতি দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শহরের ডনচেম্বারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন বিগত সতেরোটি বছর আমরা তিনটি দাবিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সেই তিনটি দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
সে একটি দাবি পূরণ হয়েছে শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের তোপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করে বিতাড়িত হয়েছে। আরো দুইটি দাবি ছিল একটি হল অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং আরেকটি দাবি ছিল আমাদের নেতা প্রিয় অভিভাবক বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এখনো এই ২টি দাবি আমাদের পূরণ হয় নাই। সুতরাং আমরা বলেছিলাম এই দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। তবে যত আমাদের এই দুইটি দাবি এখনো পূরণ হয় নাই আমরা কিন্তু এখনো রাজপথ ছেড়ে যাইনি। আপনাদের সবাইকে রাজপথে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিবের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিশেষ অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বেনজির আহমেদ টিটু, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ- অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন উদ্দিন, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, আজহারুল ইসলাম মান্নান, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, নুরজাহান মাহবুব, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ র জপথ ছ ড় ব এনপ র আম দ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।