আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শত্রুদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পিলখানায় দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সেদিন যিনি রাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিলেন—শেখ হাসিনা, তিনি কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? সহকর্মীদের রক্ষায় সেনাপ্রধান কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? শেরাটন থেকে ভালো ভালো খাবার নিয়ে যাঁরা বিদ্রোহ করলেন, তাঁদের খাওয়ানো হলে কী বুঝবে মানুষ।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে এই সভার আয়োজন করে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণা এক দিনে তৈরি হয়নি উল্লেখ করে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে এই দলের প্রতি, শেখ মুজিবের প্রতি ঘৃণা জন্ম হয়েছে। কারণ, তারা কোনোদিনই বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসেনি। তারা ভালোবেসেছে তাদের পদ, তাদের ক্ষমতা, তাদের পরিবার—এভাবেই তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করা শুরু করেছে।’

৫৭ জন অফিসার মুক্তিযুদ্ধেও শহীদ হননি—এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী দেশের শক্তি। দুঃসময়ে এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালে যখন গোটা জাতি কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সেই সময়ে এই সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আবার ৭ নভেম্বর একইভাবে এই সেনাবাহিনীই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে। এবারও দেখেছি, ২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশপ্রেমী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।’

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা ধ্বংসের চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়েছেন সেই দিল্লিতে, ভারতে। সেখান থেকে তিনি চক্রান্ত করছেন, পরিকল্পনা করছেন কী করে এই গণ–অভ্যুত্থানের বিজয়ের সব ফলাফল নস্যাৎ করে দেওয়া যায়। সেখান থেকে চক্রান্ত করছেন, বাংলাদেশে কীভাবে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়। একটা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। তারই চক্রান্তে দেখছি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পক্ষ থেকে একটা অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না করলে কোনোভাবেই স্থিতিশীল অবস্থা আসবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সে জন্যই বারবার বলেছি, দেশে প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটার জন্যই আন্দোলন করেছি দীর্ঘদিন ধরে। সেই জায়গায় বিভিন্ন রকম প্রশ্ন তুলে একটা নৈরাজ্যের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কারও নাম উল্লেখ না করে ফখরুল বলেন, কিছু মানুষ অন্যায়ভাবে দেশকে, দেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার চেষ্টা করছে। সবাইকে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছে। একইভাবে একই কায়দায় দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটা কোনোমতেই দেশের স্বাধীনতার জন্য শুভ নয়। এটা কোনোমতেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। স্থিতিশীলতার জন্য শুভ নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি শক্ত হাতে সরকারকে পরিচালিত করুন। এ কথা কেউ যেন না বলে, আপনারা পক্ষপাতিত্ব করছেন। আমরা সেটা শুনতে চাই না। কারণ, আপনি অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত মানুষ। সারা বিশ্বে আপনার নাম আছে। আশা করব, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা শান্তি এবং ভবিষ্যতের জন্য সমৃদ্ধি আনবেন।’

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.

) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। এর সঙ্গে জড়িত ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র, সংশ্লিষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এ ঘটনার তিন–চার দিন আগে হত্যাকারীরা সভা করেছে তাপস (শেখ ফজলে নূর তাপস) ও নানকের (জাহাঙ্গীর কবির নানক) সঙ্গে সম্ভবত অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। এ জন্য আগের রাতে নৈশভোজে তিনি (শেখ হাসিনা) অংশ নেননি। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার জন্য। মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শক্তিশালী সরকার চাই। দুর্বল সরকার আর দেখতে চাই না। অতি দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেখতে চাই। যে সরকার প্রতিবেশী বা অন্যান্য পরাশক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারে—এ ধরনের সরকার হতে পারে কেবল নির্বাচিত সরকার।’

আলোচনা সভায় শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পিলখানা হত্যাযজ্ঞে নিহত সাবেক বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, তাঁর বাবা ছিলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য আতঙ্ক। এই হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ ধ্বংস করতেই সাংবাদিক দম্পতি সাগর–রুনিকে হত্যা করা হয়েছে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা নিজে জড়িত বলে আলোচনা সভায় অভিযোগ করেন সে সময় র‍্যাব–২–এর সিইওয়ের দায়িত্বে থাকা লে. কর্নেল (অব.) শামসুজ্জামান খান। আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সকাল ১০টার মধ্যে পৌঁছালেও তাঁকে ভেতরে ঢুকে বিদ্রোহ দমনে বাধা দেওয়া হয়েছিল।

আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সদস য ব এনপ র র জন য করছ ন ফখর ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ