নড়াইলে এ বছর টমেটোর ফলন ভালো হলেও বিপাকে পড়েছে চাষিরা। পাইকাররা না আসায় এবং বাজারে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় চাষিদের উৎপাদিত পাকা টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
কৃষকদের ভাষ্য, তারা এই সবজিটি চাষ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। পাঁচ টাকা কেজি বললেও ক্রেতারা টমেটো কিনতে রাজি হচ্ছেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ১০০ টন। টমেটো উৎপাদন হয়েছে তার থেকে বেশি।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান, বেড়েছে লেনদেন
সিএসইতে যোগ দিলেন জামাল ইউসুফ
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার রুখালী গ্রামের টমেটো চাষি আমিন মোল্যা বলেন, “পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। এক একটা চারার পেছনে ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয়েছে। টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। তবে, পাইকারদের কেউ টমেটো কিনতে আসছেন না ক্ষেতে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রথম দিকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে ছিলাম টমেটো। এখন সেই টমেটো বাজারে নিয়ে গেলে আড়তদাররা বলেন, এগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাও। এবার এই সবজি চাষ করে খুবই লস হলো। টমেটো এখন হয়েছে পাখিদের খাদ্য।”
সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের টমেটো চাষি খায়রুল আলম বলেন, “এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারিনি। ৫ টাকা কেজি তাও কেউ নিচ্ছে না।”
লোহাগড়া বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা হাসান মোল্যা বলেন, “আড়ত থেকে আমরা ২৪০ টাকায় ৪০ কেজি (এক মণ) টেমেটো কিনে ১০টাকা দরে বিক্রি করছি।”
লোহাগড়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও কাঁচামাল আড়তদার ইবাদত সিকদার বলেন, “আমরা চাষিদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে টমেটো ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করি। চাষিরা কেজি প্রতি টমেটোর দাম পাচ্ছেন ৩-৭ টাকা। এবার টেমেটোর ব্যাপক ফলন হওয়ায় বাজারে এই সবজিটির দাম পড়ে গেছে।”
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান বলেন, “এ বছর নড়াইলে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বিভিন্ন জেলায় টমেটোর চাহিদা কম থাকায় নড়াইলের বাজারে এই সবজির দর কমে গেছে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল চ ষ কর উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।