নতুন ছাত্রসংগঠনে ‘বঞ্চিত’দের আজ বিক্ষোভ, ঢাকা ব্লকেডের হুঁশিয়ারি
Published: 26th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নবগঠিত ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদে’র আত্মপ্রকাশ ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থী আহত হন। এর বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন এবং দাবি পূরণ না হলে পরদিন ‘ঢাকা ব্লকেডে’র হুঁশিয়ারি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইম আবেদিন এবং সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু। পরে রাত ১১ টার দিকে তারা সড়ক ছাড়েন।
কর্মসূচিতে নাঈম আবেদিন বলেন, প্রাইভেট রক্ত মাড়িয়ে তারা এই ছাত্রসংগঠন করতেছে। প্রাইভেটের রক্ত ওপর দাঁড়ায়া সব উপদেষ্টা হইছে। প্রাইভেটের রক্তের ওপর এ দেশ স্বাধীন হইছে। কিন্তু নেতৃত্বে প্রাইভেটকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে নতুন ছাত্রসংগঠনে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল, মাদরাসা, সাত কলেজ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে রাখে নাই। তারা আমাদের বাদ রাখলে পুরো ‘ঢাকা ব্লকেড’ করে দিব। কোনো দল কিছুই হইতে দিব না।
এম জে এইচ মঞ্জু বলেন, হামলার বিচারের দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। তাতেও হামলাকারীদের বিষয়ে কোনো সুরাহা যদি না হয়, তাহলে ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ঢাকা ব্লকেড’ করা হবে।
গত এক সপ্তাহ থেকে সমন্বয়ক রিফাত রশীদকে সদস্যসচিব করার দাবিতে সরব ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটিটি দিয়েছিলেন রিফাত রশীদ। এরসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নাঈম আবেদীনকে মুখ্য সংগঠক করার পক্ষে ছিলেন তারা। তবে এদের কেউই শীর্ষ পদে জায়গা পাননি। এর ফলেই বাঁধে বিপত্তি।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুর হাসান নির্বাহী কমিটির সদস্য নাঈম আবেদীনের সঙ্গে ছবিযুক্ত করে ফেসবুকে পোস্ট করেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, নতুন রাজনৈতিক চিন্তাধারা এখন সময়ের দাবি। তাই নতুন ছাত্র সংগঠনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নাইম আবেদিন ভাইকে মুখ্য সংগঠক হিসেবে দেখতে চাই।
এর ফলশ্রুতিতে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রাইভেটের একদল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে এসে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। তারা ‘ঢাবির সিন্ডিকেট মানি না মানবো না’, ‘রিফাত রশীদ ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘রিফাত রশীদ এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শাহজাদী কথা সমকালকে বলেন, প্রাইভেটের কাউকে রাখা হয়নি। আমরা অন্তত রিফাত রশীদকে চেয়েছিলাম। রিফাত রশীদকে সব জায়গায় বঞ্চিত করা হয়েছে। এখানে ঢাবিয়ানদের স্বৈরাচারমূলক কমিটি আমরা মেনে নিব না।
বিকেল ৫টার দিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে বাইরে সংবাদ সম্মেলন করতে না পেরে মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এ সময় প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে থাকেন। এরমধ্যেই আবু বাকের মজুমদার কমিটি ঘোষণা করেন।
তারপর তারা বের হয়ে মিছিল নিয়ে লেকচার থিয়েটার ভবন হয়ে এগোলে মলচত্বরে উভয় পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে কয়েকজন আহত হন। চার-পাঁচজনের জামা ছিঁড়ে যায়। পরে তারা টিএসসি হয়ে ডাকসু ভবনে গিয়ে মিছিল শেষ করেন। এর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় প্রাইভেটের বিক্ষোভরত কয়েকজনকে চিহ্নিত করে কলার চেপে ধাক্কা দিতে দেখা যায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের।
মারামারিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারহানা বুশরা অমি, মো.
ছাত্রসংগঠনের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, মধুর ক্যান্টিনে যারা বিক্ষোভ করেছে, তারা কমিটি ঘোষণা হওয়ার আগেই বৈষম্যের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিচ্ছিল। এতে বোঝা যায়, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। তবে আমরা সারা দেশের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করে যাব, কারও কোনো যৌক্তিক দাবি থাকলে আমরা আলোচনা করে তা সমাধান করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?