মনিকা লিওনস্কি মনে করেন, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং এ নিয়ে মিথ্যা বলার পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিল ক্লিনটনের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। গত মঙ্গলবার ‘কল হার ড্যাডি’ শীর্ষক পডকাস্টে তিনি এ কথা বলেন।

১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন মনিকা লিওনস্কি। সে সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ২২ বছর বয়সী ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এ ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলায় অভিশংসনের মুখে পড়েন বিল ক্লিনটন।

‘কল হার ড্যাডি’ পডকাস্টের উপস্থাপক অ্যালেক্স কুপারকে মনিকা লিওনস্কি বলেন, ‘আমি মনে করি এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সঠিক উপায় ছিল সম্ভবত এ কথা বলা যে এটি কারও দেখার বিষয় না এবং তারপর পদত্যাগ করা।’

বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী মনিকা আরও বলেছেন, তাঁদের কথিত যৌন সম্পর্কের বিষয়ে বিল ক্লিনটনের সত্যবাদী হওয়া উচিত ছিল। অথবা মিথ্যা না বলে কিংবা স্বার্থপরভাবে তাঁকে বলির পাঁঠা না বানিয়ে অন্য একটি উপায় খুঁজে বের করতে পারতেন তিনি।

মনিকা মনে করেন, তিনি সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর অনেক বেশি সহনশীল ছিলেন। তাঁর পদত্যাগের অর্থ কী হতে পারে, সে বিষয়টির গভীরতা ভালো করেই বুঝতেন মনিকা।

মনিকা লিওনস্কি ছিলেন এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, যার কারণে ১৯৯৮ সালে অভিশংসনের মুখে পড়েছিলেন বিল ক্লিনটন।

হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির জন্য স্বতন্ত্র আইনজীবী কেন স্টারের করা একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ক্লিনটন ও মনিকা ওভাল অফিসে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ক্লিনটন শপথ নিয়ে ফেডারেল বিচারকের সামনে এ ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছিলেন।

মনিকার সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্ত চলাকালে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে আরকানস অঙ্গরাজ্যের সাবেক কর্মচারী পলা জোন্সের করা একটি যৌন হয়রানির মামলা সামনে আসে। পলা জোন্স দাবি করেছিলেন, ক্লিনটন ১৯৯১ সালে গভর্নর থাকাকালে লিটল রকের একটি হোটেলকক্ষে তাঁকে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং তাঁর সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।

আদালতে পলা জোন্সের দায়ের করা মামলার কার্যক্রম চলাকালে আইনজীবী কেন স্টার আবিষ্কার করেন, ক্লিনটন মনিকার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে শপথ নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন। আর এ ঘটনাই তাঁর অভিশংসনের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে শপথ নিয়ে মিথ্যা বলা এবং ন্যায়বিচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগে উত্থাপন করা হয়েছিল। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্লিনটনকে খালাস দেওয়ার পক্ষে ভোট দেয় সিনেট।

ক্লিনটন বলেছিলেন, তিনি কখনো পদত্যাগ করার কথা ভাবেননি।

বিল ক্লিনটন ২০১৮ সালের মে মাসে সিবিএস নিউজকে বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম এটি (অভিশংসন) সফল হবে না। তবে এটি কোনো সুখকর অভিজ্ঞতা ছিল না। ভোটের মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি মানুষ যখন রিপাবলিকানদের দৃঢ়ভাবে এটি (অভিশংসনের চেষ্টা) বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল, তখন আমি আনন্দের সঙ্গে লড়েছিলাম। তারা জানত, এখানে অভিশংসনের যোগ্য কিছু নেই। তাই আমরা শেষ পর্যন্ত এটি লড়েছি। আর আমি খুশি।’

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর ক্লিনটন স্বীকার করেছিলেন, কেন তিনি মনিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে সিবিএসকে বলেছিলেন, ‘আমার এ কাজটি করার পেছনের কারণটি ছিল খুবই বাজে। আমার সুযোগ ছিল বলেই এমন কাজটি করেছি। আমি মনে করি, কোনো কাজ করার আপনার সুযোগ আছে বলেই সেই কাজটি করে ফেলা নৈতিকভাবে সবচেয়ে বাজে কাজ।’

ক্লিনটন আরও বলেন, ‘আমি এটি সম্পর্কে অনেক ভেবেছি। এর আরও অনেক পরিশীলিত এবং জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু এর কোনোটিই অজুহাত নয়।’

লিওনস্কি বলেছেন, যৌন কেলেঙ্কারির পরে তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ হারিয়েছেন। কিন্তু তিনি তাঁর সত্যিকারের সত্তা ধরে রাখতে পারায় গর্বিত।

আরও পড়ুনক্লিনটন ফায়দা লুটেছেন: মনিকা০৭ মে ২০১৪আরও পড়ুনমনিকা সম্পর্কে হিলারির যে ধারণা ছিল১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পদত য গ বল ছ ল ন ন মন ক ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ