ক্রমেই টিভি নাটক থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন টিভি নাটকের তারকা অভিনয়শিল্পীরা। তাদের শিডিউল মিলছে না বলে অনেক নির্মাতার অভিযোগ। বিশেষ করে ধারাবাহিক নাটকের ব্যাপারে নাক ছিটকানো ভাব অনেকের মধ্যেই। এমন অবস্থার মধ্যেও উল্টোপথে হাঁটছেন অনেক অভিনেত্রী। তাদের মধ্যে অন্যতম তানজিকা আমিন। মানসম্পন্ন গল্প ও চরিত্র পেলে তাঁকে দেখা যায় ধারাবাহিকে। স্রোতের বিপরীতে হাঁটা এ অভিনেত্রীর নতুন ধারাবাহিক শুরু হয়েছে মাছরাঙা টেলিভিশনে। সাগর জাহান পরিচালিত ‘অনলাইন, অফলাইন-সিজন টু’ ধারাবাহিক দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এখন তিনি। বৈশাখী টিভির ‘হাবুর স্কলারশিপ’ নাটকটিও তাঁকে অন্যরকম পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছে।
‘অনলাইন, অফলাইন-সিজন টু’ নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চার বছর আগে মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘অনলাইন অফলাইন’ নাটকটি প্রচার হয়েছিল। নাটকে আমার অভিনীত ‘রুমা ভাবি’ চরিত্রটি আজও দর্শক মনে রেখেছে। ভালো কাজ দর্শক সবসময়ই মনে রাখেন। দর্শকের চাহিদার কারণে এবার এ ধারাবাহিকের সিজন ২ পর্দায় এনেছেন নির্মাতা। এটি মূলত একটি ট্রেন্ডি প্রোডাকশন। গল্পে অনেক টুইস্ট আছে। প্রথম সিজনের মতো এ সিজনেও দর্শক আনন্দ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করছি।’
বিনোদন জগতের অসংগতি নিয়ে কথা বলে থাকেন তানজিকা আমিন। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি হাঁটছি, কী খাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি– এ নিয়ে রিলস হচ্ছে। এখন তো রিলস বানিয়েই অনেকে তারকা হয়ে যাচ্ছেন। তারপর দুই লাখ, চার লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন। এতদিন যারা অভিনয় শিখে এসেছেন, তারা পাচ্ছেন এক নাটকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাদের কোনো মূল্য নেই! আর যাদের ভিউ বেশি তাদের কাজে নেওয়া হচ্ছে। তাদের অভিনীত ফিকশনের ছোট ছোট রিলস করে যখন ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, ভিউ বেড়ে যাচ্ছে।’
এই দুরবস্থার কারণে অনেক অভিনয়শিল্পী অভিনয় থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তানজিকা আরও বলেন, ‘একটি প্ল্যাটফর্ম ধরুন ‘এক্স’, সেখানে একজন অভিনয়শিল্পী কাজ করেছেন, তার নামও ‘এক্স’। ওই প্ল্যাটফর্মের বানানো তিনটি প্রোডাকশন ফ্লপ। অডিয়েন্স দেখল না। তারপরও পরবর্তী প্রোডাকশন ওই শিল্পীকে নিয়ে করা হচ্ছে। ভিউ চক্রের কারণেই এমনটি হচ্ছে। এই ব্যাপারটার জন্য অনেক ভালো অভিনয়শিল্পী পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার রাগে ক্ষোভে ইন্ডাস্ট্রি থেকে চলে যাচ্ছেন।’
তানজিকা আমিন অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বকুল ফুলের মালা’। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় এ সিনেমায় তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন নায়ক রিয়াজ। এরপর নাটকে অভিনয় করলেও দীর্ঘদিন তাঁকে সিনেমায় দেখা যায়নি। লম্বা বিরতির পর তাঁকে পাওয়া যায় ‘গহীনের গান’ সিনেমায়। ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ সিনেমায় ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছিলেন। এরপর সেভাবে আর বড় পর্দায় দেখা না গেলেও ব্যস্ত আছেন ছোট পর্দা ও ওয়েবমাধ্যমের কাজ নিয়ে। দীর্ঘদিন নতুন কোনো সিনেমায় তাঁকে দেখা যায়নি।
বড় পর্দায় আবার কবে দেখা যাবে। এমন প্রশ্নে তাঁর ভাষ্য ‘এটা আগেভাগেই বলতে পারছি না। ছোট পর্দা, বড় পর্দা যেটাই হোক, আমি সেই কাজটি করতে চাই, যা নিজের ভালো লাগবে। কাজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মনের ওপর জোর খাটিয়ে প্রতিদিন অভিনয় করে যেতে হবে, এটা আমি মানি না। খেয়াল করলে দেখবেন, অন্য সবার চেয়ে আমার কাজের সংখ্যা অনেক কম। অনেক যাচাই-বাছাই করে কাজ করি বলে আমার কাজের সংখ্যা কম, তা কিন্তু নয়। আসলে যে কাজটি ভালো লাগে, সেটিই করি। ভালো কাজ যেহেতু প্রতিদিন হয় না, আমাকেও তাই প্রতিদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয় না।
টিভি নাটক ও সিনেমায় অভিনয়ের বাইরে ওয়েবে ব্যস্ততা রয়েছে তাঁর। কিছুদিন আগে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’র সিরিজের কাজ শেষ করেছেন তিনি। এতে তিনি অভিনয় করেছেন নুরজাহান চরিত্রে।
গত বছরের শেষ দিকে নতুন জীবন শুরু করেছেন তানজিকা। বিয়ে করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাইফ বসুনিয়াকে। ছয় বছর আগে তাদের পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব, পরে বিয়ে। তানজিকার স্বামী দুই যুগেরও বেশি সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকেন। অভিনয় ছাড়বেন কিনা, এমন প্রশ্নও ওঠে। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘অভিনয় আমার প্রাণের জায়গা, এটি আত্মার সঙ্গে মিশে আছে। ঢাকা আমার প্রাণের শহর। ফলে দুটোর কোনোটিই ছাড়ছি না। তবে আমাকে তো যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকতে হবে।’
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।
পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’
বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’
পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’
পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।
২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।