২ মিলিয়ন পাউন্ড ডিভিডেন্ড বিতরণের মাইলফলক এসবিইউকের
Published: 27th, February 2025 GMT
গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক মাইলফলকে পৌঁছেছে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড (এসবিইউকে)। বাংলাদেশের শেয়ারহোল্ডারদের (অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি) যথাক্রমে ৫১ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ শেয়ারহোল্ডিং অনুযায়ী ২ মিলিয়ন পাউন্ড ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে। এই ডিভিডেন্ড পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্থিতিশীলতা, কৌশলগত পুনঃবিন্যাস, বাংলাদেশের প্রতি আস্থার প্রমাণ এবং নিয়মিত চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এসবিইউকের চেয়ারপারসন মো.
এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংক পিএলসির সিইও/এমডি মো. শওকত আলী খান, এসবিইউকের সিইও মাসুম বিল্লাহ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস (অতিরিক্ত সচিব, কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখা, এফআইডি, অর্থ মন্ত্রণালয়) এবং শেখ ফরিদ (যৌথ সচিব, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখা)।
এসবিইউকের প্রতিনিধিরা অতীতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে ব্যাংকিং লাইসেন্স হারানো এবং শেয়ারহোল্ডিং স্ট্রাকচার নিয়ে মূল কারণসমূহ ছিল। এছাড়াও তারা ব্যাংক হিসেবে এসবিইউকের ঐতিহাসিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার ক্ষেত্র দিয়ে আলোচনা করেন।
সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডের ইতিহাস
১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি মূলত একটি পূর্ণসেবা ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হত, যা খুচরা বা ডিটেইল ব্যাংকিং, বাণিজ্যিক আর্থিক সেবা এবং রেমিটেন্স সমাধান প্রদান করত। তবে, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে এবং অপারেশনাল অনিয়মের কারণে ১৯৯৯ সালে এর বিদেশী শাখা লাইসেন্স বাতিল করা হয়, ফলে এটি সোনালী ট্রেড অ্যান্ড ফাইন্যান্স ইউকে লিমিটেড হিসেবে পুনর্গঠিত হয়।
২০০১ সালে, সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড একটি নতুন ব্যাংকিং লাইসেন্সের অধীনে কাজ শুরু করে, যা ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস অথোরিটি (এফএসএ) দ্বারা ইস্যু করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি শেয়ারহোন্ডিং কাঠামোর অধীনে কাজ করেছিল যেখানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় প্রধান শেয়ারহোল্ডার ছিল ৫১ শতাংশ এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসির শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ।
তবে এসবিইউকে ব্যাপক রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যার ফলে ২০১৬ সালে ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথোরিটি (এফসিএ, যা পূর্বে এফএসএ ছিল) আন্টি-মানি লন্ডারিং (এএমএল) ফ্রেমওয়ার্কে ত্রুটির কারণে ৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা করে। পরবর্তীতে নতুন জমা গ্রহণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা এবং এফসিএর এএমএল ওয়াচলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্যাপক পুনরুদ্ধার উদ্যোগের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড মূলধন প্রবাহিত হয়ে যাওয়ার ফলে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ওয়াচলিস্ট থেকে বাদ পড়ে।
তবে, চলমান রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথোরিটি (পিআরএ) দ্বারা সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডের ব্যাংকিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
কৌশলগত পরিবর্তন এবং আর্থিক সাফল্য
এই রেগুলেটরি জটিলতার মধ্যেও এসবিইউকে ‘প্রজেক্ট ফিনিক্স’ এর অধীনে একটি কৌশলগত রূপান্তরে যাত্রা শুরু করে। ফলশ্রুতিতে ট্রেড ফাইন্যান্স এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেবার দিকে মনোনিবেশ করে এবং একটি নন-বাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনে (এনবিএফআই) পরিণত হয়। এই পরিবর্তনটি ২০২২ সালের আগস্টে ব্যাংকিং অনুমোদন বাতিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হয় এবং পরবর্তীতে এটি সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড নামে রুপান্তরিত হয়।
রূপান্তরের পর থেকে, এসবিইউকে অসাধারণ আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে প্রি-ট্যাক্স মুনাফা হিসেবে ১ দশমিক ৫ পাউন্ড মিলিয়ন রিপোর্ট করে, যা ২০২৩ সালে ৮ মিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছেছে। এটি তার কৌশলগত পুনর্গঠন, ব্যয়-কার্যকরী ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রমাণ। ২০২৩ সালে ট্রেড ফাইন্যান্স থেকে আয় প্রতি মাসে ১ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়, যা প্রতিষ্ঠানটিকে মোট ১ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করতে সহায়তা করেছে। এটি বছরে ১০৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিফলন।
এছাড়াও, অপারেটিং খরচ ২০২৩ সালে কৌশলগতভাবে ৩৭৭ মিলিয়ন পাউন্ডে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা প্রোজেক্টেড বাজেটের তুলনায় ৪ শতাংশ কম এবং বছরে ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই আর্থিক উন্নতির কারণে এসবিইউকে তার শেয়ারহোল্ডারদের ২ মিলিয়ন পাউন্ড ডিভিডেন্ড প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে স্টেকহোল্ডারদের জন্য সাস্টেইনেবল ভ্যালু প্রদান করার প্রতিশ্রুতিকে করেছে শক্তিশালী।
রেগুলেটরি আশ্বস্ততা এবং ভবিষ্যত প্রতিশ্রুতি
কমপ্লায়েন্স এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতি প্রতিশ্রুতি আরও শক্তিশালী করার জন্য, এসনিইউকে আংশীদারিত্ব করেছে বিগ ফোর অন্সালটেন্সি ফার্ম (পিমব্লিউসি) এর সাথে, যাতে তারা ‘প্রজেক্ট ফিনিক্স’ বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। এই অংশীদারিত্বের লক্ষ্য হলো প্রতিষ্ঠানের শাসন কাঠামোকে সহজতর করা, রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সাথে প্রি-আপ্লিকেশন আলোচনাগুলো পরিচালনা করা এবং শেষ পর্যন্ত এমবিইউকে-কে তার ইউকে ব্যাংকিং লাইসেন্স পুনরায় আবেদন করার জন্য প্রস্তুত করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসব ইউক র ফ ইন য ন স ল দ শ ইউক আর থ ক প র আর থ ক ক প এলস ক শলগত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিপাক্ষিক কাজ করবে বেসিস-কোরিয়া
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে বেসিস কোরিয়া ডেস্ক ঘোষণা করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া উদ্ভাবনমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি দেশ, যেখানে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের জন্য রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশি আইসিটি খাতের সব প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কার্যকর অংশীদারিত্ব বাড়াতে পারবে। বেসিস কোরিয়া ডেস্ক হবে কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় ও যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ সহজ ও বাজার সম্প্রসারণের দ্বার উন্মোচিত হবে।
নতুন ডেস্ক প্রসঙ্গে বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য (অর্থ) ফৌজিয়া নিগার সুলতানা বলেন, বেসিস কোরিয়া ডেস্কের সদস্যরা এখন থেকে উদ্ভাবনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যার মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘কোরিয়া ডে’ পালন, কোরিয়ান বাজারে প্রবেশে নীতিগত সহায়তা, কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার সঙ্গে সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগ বা ফ্র্যাঞ্চাইজিংয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
উদ্যোক্তারা বলেন, নতুন ডেস্কের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রাপ্ত ব্যবসায়িক অনুসন্ধান বা লিড সদস্যের মধ্যে শেয়ার করা হবে, কোরিয়াভিত্তিক কয়েকটি আইসিটি ইভেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। অন্যদিকে কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে নেটওয়ার্কিং ও বিটুবি সেশনের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণ ও কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কয়কা), কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সির (কট্রা) মতো কোরিয়ান উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক দুদেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধা উপস্থাপন করে বলেন, বেসিস কোরিয়া ডেস্ক আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের মাইলফলক হবে। বেসিস-কোরিয়া ডেস্ক কোরিয়ার রপ্তানি বাজারকে সমৃদ্ধ করবে। নতুন উদ্যোগ দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব (আইসিটি প্রমোশন ও গবেষণা অনুবিভাগ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো: তৈয়বুর রহমান বলেন, বেসিস কোরিয়া ডেস্ক শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়: বরং বেসিস সদস্যসহ বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপার সম্ভাবনার ইঙ্গিত করছে। বেসিস-কোরিয়া ডেস্কের উদ্যোগ বাংলাদেশকে শক্তিশালী আইটি হাব রূপান্তরে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
বেসিস-কোরিয়া ডেস্কের চেয়ারম্যান অ্যাডওয়ার্ড কিম বলেন, বাংলাদেশি ও কোরিয়ান প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে কৌশলগত বন্ধুত্ব তৈরিতে কাজ করবে ডেস্কটি। নতুন ডেস্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যেকার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের সেক্টরে পারস্পরিক ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রিলিয়ন-ডলারের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি ও ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) কৌশলগত সহযোগিতার জন্য আদর্শ মডেল তৈরি করেছে। বাংলাদেশ তার দৃঢ়, প্রাণবন্ত তরুণ জনগোষ্ঠী ও সংস্কারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্ভাবনী প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।
সভাপতির বক্তব্যে বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির বলেন, বেসিস-কোরিয়া ডেস্ক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কোরিয়ার বিশাল বাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করা। ফলে প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা আমাদের আইটি পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।