ঘরের বাতাসেও দূষণ, সুস্থ থাকতে করণীয়
Published: 28th, February 2025 GMT
বর্তমানে বায়ুদূষণ এতটাই ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গেছে যে আমরা ঘরের ভেতরেও নিরাপদ নই। তবে ঘরের বাতাসের মান নিয়ে অনেকেই তেমন একটা মাথা ঘামান না, যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। এমনকি অফিস-আদালতেও অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ বা ‘ইনডোর এয়ার পলিউশনে’র ঝুঁকি অনেক বেশি, যা দিন দিন মানুষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে আনছে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে এর প্রতিরোধ জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ বেশির ভাগ সময়ই বাড়ির ভেতরে বায়ুদূষণের শিকার হয়। আর অ্যানার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, বাইরের চেয়ে বাড়ির ভেতরে বায়ুদূষণের মাত্রা দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি। অথচ ঘর আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রতিবছর এই অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের কারণে অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। যার মধ্যে প্রায় ২ লাখ হলো পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ হৃদ্রোগ, ২১ শতাংশ শ্বাসনালির সংক্রমণ, ২৩ শতাংশ স্ট্রোক এবং ১৯ শতাংশ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ১৭০, যা ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৪–এর ডিসেম্বরে বায়ুদূষণের হার যেমন ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত বছরের জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষ প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাব, নিম্নমানের রং ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, বাহ্যিক দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। এ ছাড়া, গাড়ির ধোঁয়া ও রাস্তার ধুলাবালি অন্দরে প্রবেশ করে বায়ুকে দূষিত করে। গ্যাসের চুলা থেকে যে কার্বন–মনোক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড নির্গত হয়, সেগুলোও ঘরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও ছত্রাকের বৃদ্ধির কারণেও বায়ু দূষিত হয়।
অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের কারণে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে—
• শিশুদের ফুসফুসের বিকাশে সমস্যা
• দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস
• অ্যালার্জি, চোখের জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা
• ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি
তাহলে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কীভাবে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখা যায়? এটা কঠিন কোনো বিষয় নয়। সহজ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই ঘরের বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব।
নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
অন্দরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। জানালা ও দরজার পর্দা, বিছানার চাদর, কার্পেট ইত্যাদি দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে এগুলোতে জমতে থাকে ধুলা, ময়লা ও ছত্রাক, যা ঘরের পরিবেশকে করে তোলে অস্বাস্থ্যকর। তাই এগুলোকে নিয়মিত পরিষ্কার করতে একেবারেই ভুলবেন না। ঘর পরিষ্কার রাখলে বাতাসের মান অনেকটাই বেড়ে যায়।
পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা
ঘরের ভেতর সরাসরি আলো–বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। প্রতিদিন জানালা খুলে ঘরের ভেতরে তাজা বাতাস ও সূর্যের আলো আসার সুযোগ করে দিন। সূর্যের আলো রোগজীবাণু ধ্বংসে অনেক বেশি কার্যকর। ভেন্টিলেশন ভালো থাকলে বাতাস চলাচল স্বাভাবিক হয়, যা দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
ঘরেই ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ রাখা
কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে, যেগুলো বাতাস পরিশোধন করতে সাহায্য করে। স্নেক প্ল্যান্ট, পিস লিলি, অ্যালোভেরাসহ বেশ কিছু গাছ ঘরের বাতাস থেকে ক্ষতিকর গ্যাস যেমন কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে, যা ঘরের পরিবেশকে রাখে স্বাস্থ্যকর। পাশাপাশি, ইনডোর প্ল্যান্ট অন্দরের শোভা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়।
রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানো
শক্তিশালী কেমিক্যালযুক্ত এয়ার ফ্রেশনার বা ক্লিনিং প্রোডাক্টের পরিবর্তে বেছে নিন প্রাকৃতিক উপাদানগুলো। ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে ব্যবহার করুন বেশ কিছু সহজলভ্য উপাদান, যেমন লেবু, বেকিং সোডা, নিমপাতা ইত্যাদি। সেই সঙ্গে ফ্রেশনার ব্যবহার না করে বেছে নিতে পারেন নিজের পছন্দসই কোনো ‘এসেনশিয়াল অয়েল’।
ইকো-ফ্রেন্ডলি পেইন্টের ব্যবহার
বাজারে প্রচলিত পেইন্ট বা রঙে থাকা ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস ধীরে ধীরে বাতাসে ছড়িয়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। তাই এর নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন লো-ভিওসি, নন-টক্সিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ইকোফ্রেন্ডলি পেইন্ট। এই পেইন্ট জলীয়ভিত্তিক, ফলে এতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। এগুলো বাতাসে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গমণ হ্রাস করে এবং অন্দরকে করে তোলে আরও স্বাস্থ্যকর। এ ছাড়া এগুলো গন্ধহীন ও পরিবেশবান্ধব, তাই শিশু ও অ্যালার্জিপ্রবণ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ঘর র ব ত স পর ষ ক র ব যবহ র পর ব শ প ইন ট ইনড র
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?