নায়েল বারগুতি এখন বার্ধক্যে উপনীত। ৬৭ বছর বয়সী এ মানুষটি শেষমেশ মুক্তি পেয়েছেন। তবে এর আগে তাঁর জীবনের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ সময়ই কেটে গেছে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থেকে।

ফিলিস্তিনি নাগরিক নায়েল হলেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটানো রাজনীতিক। ফিলিস্তিনি বন্দীদের ‘ডিন’ (প্রধান) হিসেবেও পরিচিত তিনি। বয়স আর দুঃসহ কারাজীবনে অনেকটা নাজুক হয়ে পড়া নায়েলকে গতকাল বৃহস্পতিবার মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

টানা ১৫ মাস বিরামহীন হামলা চালিয়ে গাজা উপত্যকাকে নরকে পরিণত করে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয় ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত, ফিলিস্তিনি বন্দী ও ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের অংশ হিসেবে বারগুতিকে মুক্তি দেওয়া হলো।

বারগুতি ৪৫ বছর ইসরায়েলি কারাগারে থেকেছেন। এর মধ্যে একটানা কেটেছে ৩৪ বছর। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকা রাজনীতিবিদ হিসেবে ২০০৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাঁর নাম উঠেছে।

বারগুতি ‘আবু আল-নুর’ নামে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে পরিচিত। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ব্যক্তিও তিনিই।

বারগুতি ৪৫ বছর ইসরায়েলি কারাগারে থেকেছেন। এর মধ্যে একটানা কেটেছে ৩৪ বছর। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকা রাজনীতিবিদ হিসেবে ২০০৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাঁর নাম উঠেছে।

২০১১ সালে হামাস ‘গিলাদ শালিত’ বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে নায়েলকে মুক্ত করে এনেছিল। তখন অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে নিজ শহর কোবারে ফেরেন তিনি। তবে সেই ছাড়া পাওয়া খুব বেশি দিনের জন্য হয়নি।

যাহোক, ২০১৪ সালে ইসরায়েল বারগুতিকে আবারও গ্রেপ্তার করে। চুক্তির শর্ত ভাঙার অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। পুনর্বহাল করা হয় ইতিপূর্বে তাঁকে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

বারগুতির পরিবার বলেছে, এবার মুক্তি পেয়ে ফিলিস্তিনের বাইরে নির্বাসিত জীবন কাটাতে সম্মত হয়েছেন তিনি। এ শর্তে ইসরায়েল তাঁকে আবার গ্রেপ্তার হওয়া থেকে মুক্ত থাকার কিছুটা স্বাধীনতা দিয়েছে।

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মিসরে একটি বাসে বসে আছেন নায়েল বারগুতি। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

জুলকারনাইনের পাঁচ প্রশ্ন ও রিয়াদকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নতুন পোস্ট দিয়েছেন আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি।

আর্মি ক্যুর চেষ্টা এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আড়িপাতা ও নজরদারির যে অভিযোগ এনেছেন নাহিদ, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সর্বশেষ পোস্টে পাঁচটি প্রশ্ন রেখে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন জুলকারনাইন।

তার পোস্টের প্রশ্ন পাঁচটি হুবহু এমন-
১. বিপ্লবের আগে ছাত্রশক্তির ঢাবি'তে লোকবল কত ছিলো? 
২. দেশের অন্য কোন-কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি ছিল?
৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের নাহিদ ইসলাম ৫ ই আগস্টের পূর্বে চিনতো কিনা? 
৪. কেবল মাত্র ছাত্র শক্তির বিপ্লব সংগঠিত করার মতো সাংগঠনিক কাঠামো ছিলো কিনা? 
৫. গুটিকয়েক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী না জানালে সাদেক কায়েমের অবদানের কথা নাহিদ ইসলামরা জাতিকে জানাতেন কিনা?

আরো পড়ুন:

মানুষ পরিবর্তন চায়, এনসিপিকে চায়, নরসিংদীতে নাহিদ

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 

এসব প্রশ্ন রাখার পর চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের বিষয়ে কথা বলেছেন জুলকারনাইন।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “পুনশ্চঃ নাহিদ ইসলাম, আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, আমি বৈষম্যবিরোধী চাঁদাবাজ রিয়াদকে কোনো রকমের সার্ভেলেন্সে রাখি নাই। আর সে চাঁদা আনতে গিয়ে যে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেটা লাগানোতেও আমার কোনো ভূমিকা নাই।” 
তিনি লেখেন, “রিয়াদ যে আপনার শেল্টারে ছিল সেটা আমি জানতাম। পরে জানতে পারলাম, আপনার ও আপনার বাবার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। আপনি আমার উপর ক্ষেপে গেছেন কারণ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে যে রিয়াদকে ধরিয়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাকি আমার।” 

“আমি দৃঢ়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই যে, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদকে পাকড়াও করার ঘটনায আমার কোনো হাত নাই।”

বৃহস্পতিবার সকালে নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শিবির নেতা সাদিক কায়েম ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ তুলে তাদের সমালোচনা করেন।

সাদিক কায়েমকে নিয়ে নাহিদ লেখেন, “শিবির নেতা সাদিক কাইয়ুম (কায়েম) সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। 'গুরুবার আড্ডা' পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহোযোগিতা করা মানে এই না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।”

তিনি আরো লেখেন, “দ্বিতীয়ত, সাদিক কাইয়ুম (কায়েম) বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলনা। কিন্তু ৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিসে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম।”

“অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম। আর কারা ক্ষমতার ভাগ বাঁটোয়ারা করতে চাইছে, গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে সে বিষয়ে অন্যদিন বলবো,” লেখেন নাহিদ।

জুলকারনাইনের বিরুদ্ধে আর্মি ক্যু করার চেষ্টা ও এনসিপির ওপর নজরদারি করার অভিযোগ তোলেন নাহিদ ইসলাম।

পোস্টে তিনি লেখেন, “২ অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্য কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।”

তিনি আরো লেখেন, “সায়েরগং ৫ অগাস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কাইয়ুমদের ব্যবহার করেছে। এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হইছে কিনা জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টিকা যায় না। এরাও টিকবে না।”

নাহিদ ইসলামের এই পোস্টের পর এক বাক্যে প্রথম পোস্টে জুলকারনাইন লেখেন, “ছেলেটা কি সকাল সকাল গঞ্জিকা মেরে দিলো?” অবশ্য কিছু সময় পর পোস্ট মুছে ফেলেন তিনি। 

নাহিদের পোস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েমকে ট্যাগ করে পাল্টা পোস্ট দেন জুলকারনাইন। তিনি লেখেন, “জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ পর এখন পর্যন্ত যেই ছেলেটার নামে একটাও অসততার অভিযোগ আসেনি, তার নাম আবু সাদিক।”

“স্বাভাবিকভাবেই তাকে ও তার শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে অনেকে মুখরোচক চটকদার আলাপ তৈরি করবে। কিন্তু এসব আলাপ তৈরি করে কি নিজেদের গোপনতম সত্য লুকানো সম্ভব হবে?”, যোগ করেন তিনি। 

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ