ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাকবিতণ্ডায় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কে সংকটের শঙ্কা
Published: 1st, March 2025 GMT
ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েনের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনই যুদ্ধ শুরু করেছিল। ফলে জো বাইডেনের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন মৈত্রী এখন চরম সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। খবর বিবিসির
শনিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই প্রকাশ্য বিরোধ শুধু ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যেই নয়, বরং ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও বড় ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়েও এখন আরও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, সেটি হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তাঁর একসময়ের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওপর হামলা বলেই মনে করবে।
এই উদ্বেগের মূলে রয়েছে ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
তিনি ইউক্রেনের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছেন, অন্যদিকে পুতিনের জন্য বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার পথ খুলে দিচ্ছেন—যা শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকেই মানতে হবে।
ফলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা এখন দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে, আর ইউরোপীয় নেতারাও তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় জেলেনস্কির প্রতি আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প।
শুধু খনিজসম্পদ চুক্তি স্বাক্ষর না করাই নয়, ইউক্রেনীয়দের বিশ্বাস, তারা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে রয়েছে এবং যদি পুতিনকে দমানো না যায়, তবে তিনি যেকোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। এ কারণেই জেলেনস্কি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির দাবি করেছেন।
তবে বৈঠকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স হস্তক্ষেপ করেন, তখন আলোচনা উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় রূপ নেয়।
এখন কূটনৈতিক মহলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব আসলে পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক চাপে ফেলার কৌশল হতে পারে—অর্থাৎ জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করা, কিংবা তাকে দোষারোপ করে পরিস্থিতিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা।
বিবিসি বলছে, যদি ট্রাম্প এই আলোচনার ব্যর্থতার পর ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা বন্ধ করেন, তবে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কতটা কার্যকরভাবে এবং কতদিন ধরে?
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘উত্তপ্ত’ বৈঠকের পর পূর্ব আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই হোয়াইট হাউস থেকে চলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে চুক্তিতে সইও করেননি।
হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তাঁরা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউস এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তার সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।