কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন দাম কবে ঠিক হবে
Published: 1st, March 2025 GMT
ব্রহ্মপুত্রের শাখাহাতী চরের মিলন মিয়া (৪০)। তিনি নিয়ে এসেছেন ১০ মণ কাঁচা বাদাম। প্রতি মণ তিন হাজার টাকা করে বিক্রির আশা থাকলেও তা দুই হাজারের ওপরে দাম বলছেন না ব্যবসায়ীরা।
চোখেমুখে লোকসানের হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, আবাদে যা খরচ হয়েছে, তা–ই উঠবে না। বাড়ির সবাই মাঠে খেটে ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষে এবারের খরচ ৮০ হাজার টাকার মতো। বাদাম হয়েছে ৩০ মণ। প্রতি মণ দুই হাজার করে বিক্রি করলে আবাদের খরচই ওঠে না। মাঝখানে বন্যার ক্ষতি ও কামলা খরচ বাদ দিয়ে হিসাব করলেও লস। এদিকে পেঁয়াজ ও ভুট্টার বীজও খারাপ হওয়ায় কপালে হাত কৃষকদের। সব জায়গাতেই কৃষকদের বিপদ।
বাজারে নতুন আলু এখন ১৫ টাকা কেজি, অথচ আলুবীজ কৃষকেরা কিনেছেন দুই হাজার টাকা মণ। অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজি; সঙ্গে বিষ, বীজ, কামলা খরচ তো আছেই। কৃষকের ঘরে আলু। কোল্ড স্টোরেজগুলো যেখানে ৫০ কেজির প্রতিটি বস্তা গত বছর ভাড়া নিয়েছে ৩০০ টাকা, সেখানে এ বছর ৪০০ টাকা নিচ্ছে। কৃষকের শ্রম কে খায়?
শিল্পপণ্যের দাম নির্ধারণ করেন শিল্পপতিরা। এটা সারা দুনিয়াতেই হয়। সেই শিল্পোন্নত দেশগুলোতে কৃষিপণ্যের দামটিও নির্ধারণ করেন কৃষকেরা। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকেরা তা পারেন না। নিজের উৎপাদিত পাট, তুলা, বাদাম, ধানের দামটা নির্ধারণ করতে পারেন না। একই অবস্থা লবণচাষিদেরও। চাষিদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারিভাবে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করার দাবি কি খুব অপ্রাসঙ্গিক?
২.বড় কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে কৃষক সমবায় ও সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সরাসরি বিপণন সুবিধা দেওয়া হয়, যা মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা কমিয়ে কৃষকদের ন্যায্য দাম পেতে সাহায্য করে।
কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ ও সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন দেশে রয়েছে ‘অ্যাগ্রিকালচারাল প্রাইস কমিশন’। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন কৃষিমূল্য কমিশন কার্যকর রয়েছে। ভারতের উদাহরণ আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। সেখানে কৃষিমূল্য কমিশন স্থাপিত হয়েছে ১৯৬৫ সালে। ভারতে বর্তমানে ২৩টি কৃষিপণ্যের সমর্থন মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নির্ধারিত মূল্যের নিচে যাতে বাজারদর নেমে না যায়, সে জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত পণ্য কিনে নেয় সরকার।
তারপরও ভারতের কৃষকেরা ১০ বছর ধরে আন্দোলন করছেন ‘মিনিমাম সেলিং প্রাইস’ বা এমএসপির জন্য। শিল্পপতিদের জন্য যেমন আছে এমআরপি, কৃষকের জন্য দরকার এমএসপি। পৃথিবীর বহু দেশে এটা নেগোশিয়েটেড হয় ইউনিয়নের মাধ্যমে।
২০১৮-১৯ সালের বাজেটে ভারত সরকার বিভিন্ন কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছে উৎপাদন খরচের ওপর শতকরা ৫০ শতাংশ মুনাফা হিসাব করে। মোট উৎপাদিত পণ্যের শতকরা ১৫ শতাংশ কেনা হচ্ছে এরূপ পূর্বনির্ধারিত মূল্যে। বাংলাদেশে ন্যূনতম সমর্থন মূল্য নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে প্রচলন আছে ধান, চাল ও গমের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণের। এটা সাধারণত উৎপাদন খরচের ওপর ৬ থেকে ১০ শতাংশ মুনাফা দেখিয়ে নির্ধারণ করা হয়। এর পরিধিও সীমিত। মোট উৎপাদনের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয় উৎপাদন মৌসুমে।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেয়, যাতে কৃষকেরা ন্যায্য দাম পান ও কৃষি উৎপাদন স্থিতিশীল থাকে। এ ছাড়া কৃষিপণ্যের ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণের জন্য ‘ফিউচার মার্কেট’ চালু আছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আগাম চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা পান। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেয়। এতে কৃষকেরা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করলেও ক্ষতির সম্মুখীন হয় না।
খুদে কৃষকের দেশে বছর বছর ছাপা অক্ষরে কত কথা বলি, দধীচির চেয়েও বড় সাধক বলি কিন্তু কৃষকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাঁর পণ্যের দাম ঠিক করা নিয়ে চুপ থাকি। পাটের মৌসুমে পাটে আগুন লাগিয়ে, আলুর মৌসুমে রাস্তায় আলু ফেলে আর সবজির মৌসুমে খেতে সবজি পচিয়ে কৃষক প্রতিবাদ করেন। সেগুলো খবরের কাগজেও ঠিকমতো ওঠে না। কৃষিপণ্যের দামের আলোচনা কৃষকের ঘরেও ঠাঁই পায় না বোধ হয়। আগে তো আলোচনা, পরে না দাম ঠিক হওয়া।
● নাহিদ হাসান লেখক ও সংগঠক
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষকদ র র জন য উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
ফতুল্লার লামাপাড়ায় মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কোর্স সমাপনী সনদ প্রদান, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থতার বর্ষপূর্তি ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।
মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়াস বিগত ২২ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা করে যাচ্ছে।
সব ধরনের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সেবার মানোন্নয়ন প্রয়াসের বর্তমান লক্ষ্য। শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, বরং মানসম্পন্ন টেকসই সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম কেন্দ্রটি পরিচালনা করে থাকে।
জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়াসে চিকিৎসা কোর্স সম্পন্নকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাক্তন সদস্যদের মনিটরিং, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থ থাকার স্বীকৃতি ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ প্রয়াসের টেকসই চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ।
তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম নারায়ণগঞ্জে ৪০ বেডে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়াসের প্রতিষ্ঠা ২০০৩ সালে হলেও আমরা লাইসেন্স পেয়েছি ২০০৬ সালে। গত ২০২১ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসছি।
এসময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও প্রাক্তন সদস্যদের প্রয়াসের সামগ্রিক কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের কাউন্সিলর মোঃ সাইফুল ইসলাম, অফিসার এডমিন সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শওকত হোসেন, লিটন, আমজাদ, বাবুসহ রিকোভারীবৃন্দ।