মশার উপদ্রব থেকে খুলনা নগরবাসীকে রক্ষায় নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে শনিবার (০১ মার্চ) মশারি মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে খুলনা নাগরিক সমাজ এ কর্মসূচি পালন করে।

মিছিলটি পিকচার প্যালেস মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। 

মিছিল-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসীন। সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার এর সঞ্চালনা করেন। 

আরো পড়ুন:

ডেঙ্গু প্রতিরোধে টুঙ্গিপাড়ায় মশক নিধন অভিযান

বান্দরবানে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুলনা নগরীর মশা নিধনে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মশার উপদ্রব স্থায়ীরূপ লাভ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে এ সঙ্কট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। যে কারণে শুধু রাতে নয়, দিনে-রাতে সবসময় মশার উপদ্রবে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

তারা আরো বলেন, মাঝে মধ্যে নগরীর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে কিছু ঔষধ ছিটালেও বিস্তীর্ণ এলাকা এর আওতায় আসেনি। বর্তমানে এ কার্যক্রমও বন্ধ বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। প্রয়োজন ড্রেন, খাল, পুকুর, ডোবা, জলাশয়, নর্দমা, ঝোঁপ-ঝাঁড় ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মানসম্মত ভেজাল বিহীন কীটনাশক পরিকল্পিত উপায়ে ছিটানো। 

এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে সমাবেশে জানানো হয়। 

সমাবেশে বক্তৃতা করেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, নাগরিক নেতা মিনা আজিজুর রহমান, মিজানুর রহমান বাবু, জাসদ নেতা রেজাউল করিম, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন প্রমুখ। 
 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে