আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে আরবী রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ মাসে ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দেন। খ্রিস্টাব্দ অনুসারে এটি মার্চ মাস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শীতের পর মার্চ মাস থেকেই গরম শুরু হয়। আজ শনিবার মার্চ মাসের প্রথম দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে রোজা। রোজার মাসে কেমন থাকবে আবহাওয়া, তা নিয়ে কৌতুহল থাকে মুসলমানদের।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত কয়েক দশকের তুলনায় এখন উত্তপ্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা, যার প্রভাব টের পাওয়া যায় গ্রীষ্মের শুরুতেই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে দাবদাহে এবারও পুড়বে সারা দেশ। গত বছর খরতাপে বাংলাদেশে বিরাজ করেছিল টানা এক মাসের তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই, গরমের প্রথম মাসে শুরু হতে যাওয়া রমজানেও আবহাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। এই মার্চ মাসে গরমের সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এপ্রিল মাস উষ্ণতম হওয়ায় মার্চ মাসের গরমটা বেশিই হয়ে থাকে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে চলতি মাস নিয়ে বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, চলতি বছর মার্চ মাসে দেশের গড় তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকতে পারে ও বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক হতে কিছুটা কম হতে পারে। এ মাসে বঙ্গপোসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। তবে তা বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই।
কেমন থাকতে পারে মার্চ মাসের আবহাওয়া
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড.
তিনি বলেন, বৃষ্টি হওয়ার আগে মেঘমালা তৈরির সময় বাতাসে আদ্রতা বেড়ে যায়। এতে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই সময় দেশের আকাশের অনেক স্থানে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে।
ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় ও দেশের অন্যত্র সামান্য কিছু এলাকায় আকস্মিকভাবে কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। পরে তা উত্তরাঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা সমকালকে বলেন, মার্চ মাসের ১০ তারিখের পর ঝড়ে হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর কালবৈশাখী ঝড় বেড়ে যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, মার্চের ১০ তারিখের পর অধিকাংশ সময়ই দেশের আকাশ প্রায় পরিষ্কার থাকতে পারে। তবে ১৫ তারিখের পর কিছু এলাকায় আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় দেশের কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, মার্চ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের দু-এক স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া ১৮ তারিখের পর রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু এলাকায় মৃদু স্বল্পস্থায়ী তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি রাতের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামী ২১ থেকে মার্চ মাসের শেষ সময় পর্যন্ত দেশের অনেক এলাকার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে এবং শেষ দিকে অনেক এলাকা মেঘাছন্ন থাকতে পারে। ২৫ তারিখের পর দেশের অনেক এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক এলাকায় মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে। এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে প্রায় তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ের (৬০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে) আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের কিছু এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
ড. মল্লিক বলেন, মার্চ, এপ্রিল ও মে- এই তিন মাস ‘ক্রিমসন টাইম’। এ সময় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এই সময়কে আমরা বর্ষাপূর্ব সময় বলি। এপ্রিল উষ্ণতম মাস হলেও মার্চ মাসের গরমটা এপ্রিলের কাছাকাছি বলা যায়। মার্চ থেকে গরমটা শুরু হয়ে এপ্রিলে গিয়ে চূড়ায় পৌঁছায়। মে মাস থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। আর জুন থেকে বর্ষাকাল শুরু হয়। মার্চ মাসে যেহেতু গরম থাকবে; সুতরাং রমজানটা আমাদের সেভাবেই পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, মার্চ মাসে কালবৈশাখী ঝড় হবে। আর কালবৈশাখী অল্প সময় ধরে হয়। এর ব্যাপ্ত ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা। এ সময় প্রচণ্ড বজ্রপাত হয়, এর সঙ্গে থাকে বিদ্যুৎ চমক।
আবহাওয়াবিদ ড. কালাম মল্লিক বলেন, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়। এই সময় কালবৈশাখীও হয়। এই তিন মাসে সারা দেশে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ মারা যান।
সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কালবৈশাখী ঝড় শুরু হওয়ার আগে দেশের উত্তর-পশ্চিম কোনে পাহাড়ের মতো উচু করে মেঘ জড়ো হয়, সঙ্গে বিদ্যুৎ চমক থাকে। এরপর যদি সেখান থেকে বৃষ্টি হয়, তবে সেটি কালবৈশাখী ঝড়। এই ঝড়ের স্থায়ীত্ব খুব অল্প সময়। কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়ে থাকে। তবে সব কালবৈশাখী ঝগে শিলাবৃষ্টি হয় না।
ড. মল্লিক বলেন, এ সময় কেউ যদি এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাড়িতে বসে থাকেন, তবে তিনি ঝুঁকিমুক্ত থাকেন। তিনি বলেন, বজ্রপাত বা বিদ্যুৎ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা যদি কেউ অনুসরণ করেন, তবে তিনি বিপদমুক্ত থাকতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র খ র পর এল ক য় ম শ র অন র অন ক সময় দ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’