দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষ কষ্টে আছে স্বীকার করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন তারা নানাভাবে দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের কষ্ট আছে। আমরা দ্রব্যমূল্য নানাভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, শুধু শাস্তি দিয়ে বা অভিযান চালিয়ে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা উদ্যোগ নিয়ে করতে পারি, সেটাও প্রমাণ হয়েছে।’’

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘খামারিদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তা পর্যন্ত আনতে হাত বদলের কারণে যে দাম বাড়ে, সেখান থেকে যদি আমরা বের হতে চাই, তাহলে আমাদের কিছু প্রক্রিয়া রাখতে হবে। সেই জন্য সুলভ মূল্যে ডিম, দুধ, মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এটা ভর্তুকির বিষয় না। আসল খরচে আমরা করছি। রোজার মাসে মাছের চেয়ে মাংসের চাহিদা বেশি থাকে। সেই কারণে এ তালিকায় মাছ রাখা হয়নি।’’

সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা শহর এবং বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন সুলভমূল্যে ডিম, দুধ, মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

রোজার নিয়ত ও সাহরির মাসয়ালা

নোয়াখালীর ৪ গ্রামে রোজা শুরু

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজারের যে চাহিদা, এটা কোনোভাবে সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। কিন্তু আমরা এটা করতে পারি, যে জরুরি প্রয়োজনীয় ডিম, দুধ, মাংসসহ যেগুলো রমজান মাসে বেশি চাহিদা থাকে; সেইগুলো যদি আমরা কম দামে বিক্রি করে দেখাতে পারি, তাহলে ব্যবসায়ীদের কাছে একটা ম্যাসেজ চলে যাবে।’’

শিক্ষার্থীদের নতুন সংগঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল; তাদের অবদানও তো আমাদের স্বীকার করতেই হবে। তারা একটা নতুন বাংলাদেশ দিয়েছে। রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি, তাতে নতুন চিন্তা, নতুন ধারণা আসুক। তাদের যদি ভুলভ্রান্তি থাকে, সেটা দেখা যাবে। এই দল করা এটা ভুল কিছু না। এটা আগামী নির্বাচনের আগে একটা নতুন মাত্রা যোগ করবে।’’ 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্যাহ আল মামুন, পুলিশ সুপার মো.

মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ প্রমুখ।

টাঙ্গাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সপ্তাহে এক দিন ৬৫০ টাকা দরে ১০০ কেজি করে গরুর মাংস বিক্রি করা হবে। এছাড়াও পাঁচ দিন ৮০ টাকা লিটার দরে দুধ, ১১৪ টাকা ডজন ডিম, ২৫০ টাকা কেজি ড্রেসিং করা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হবে।

ঢাকা/কাওছার/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রমজ ন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ