জেলেনস্কিকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানালেন স্টারমার, সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি
Published: 2nd, March 2025 GMT
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার লন্ডনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, আমরা আপনার ও ইউক্রেনের সঙ্গে আছি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে স্টারমার ইউক্রেনের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানান।
রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, এমন বন্ধু পেয়ে আমরা খুশি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক বাকবিতণ্ডায় রূপ নেয়। এরপরই তিনি যুক্তরাজ্যে আসেন।
সফরের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন পাউন্ডের ঋণ অনুমোদন করেছে, যা রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদের মুনাফা থেকে পরিশোধ করা হবে।
এদিন স্টারমার ট্রাম্প ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গেও আলোচনা করেন। রোববার লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইউরোপের প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া, জেলেনস্কি ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
তবে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক ঘটনা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন এই আলোচনাগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা থেকে সরে আসার প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে।
স্টারমার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় রাজা চার্লসের এক চিঠি হস্তান্তর করেন, যেখানে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে হাউস অব কমন্সের এসএনপি (স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি) এমপিরা এই আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন, বিশেষ করে ওভাল অফিসের বাকবিতণ্ডার পর।
এছাড়া, স্টারমার ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়েও ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। শুক্রবার রাতে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনার পর তিনি দুই নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
শনিবার ডাউনিং স্ট্রিটে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে স্টারমার বলেন, এই উল্লাসই বলে দিচ্ছে, যুক্তরাজ্যের জনগণ আপনাদের ও ইউক্রেনের পাশে রয়েছে।
জেলেনস্কি উত্তরে বলেন, আমি বহু মানুষকে সমর্থন জানাতে দেখেছি। যুদ্ধের শুরু থেকেই আপনাদের এই সহায়তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, তিনি রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। জানা গেছে, এই বৈঠকের অনুরোধ করেছিলেন জেলেনস্কি, যা যুক্তরাজ্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে।
জেলেনস্কি ব্রিটেনের সামরিক সহায়তাকে অসাধারণ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ইউক্রেনের অস্ত্র উৎপাদন করা হবে। এটি প্রকৃত ন্যায়বিচার—যিনি যুদ্ধ শুরু করেছেন, তাকেই এর মূল্য দিতে হবে।
ওয়াশিংটনে উত্তপ্ত বৈঠকের পর জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কঠিন সংলাপ সত্ত্বেও আমরা কৌশলগত অংশীদার হিসেবে থাকব। তবে আমাদের পরস্পরের লক্ষ্যগুলো সঠিকভাবে বোঝার জন্য সৎ ও সরাসরি আলোচনা করা প্রয়োজন।
যুক্তরাজ্যে পৌঁছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, আমাদের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন জরুরি। তিনি যুদ্ধের অবসান চান, কিন্তু আমাদের চেয়ে বেশি কেউ শান্তি চায় না।
রোববারের ইউরোপীয় সম্মেলনে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপকে বাদ রেখে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছে, যা ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
এর আগে, স্টারমার ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসেবে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দরকার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র র জন য আম দ র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।