আবার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে গুগল, এবার এইচআর এবং ক্লাউডে
Published: 2nd, March 2025 GMT
কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগল। এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ করেছে তারা। গুগল ‘পিপল অপারেশনস’ এবং ক্লাউড সংস্থাগুলোর কর্মীদের গত সপ্তাহে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গুগল এ কাজ করতে যাচ্ছে। সিএনবিসি এক খবরে এসব তথ্য জানিয়েছে। গত বুধবার ব্লুমবার্গ গুগলের ক্লাউড বিভাগে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের (এইচআর) প্রধান ফিওনা সিকোনির জারি করা একটি স্মারক পেয়েছে সিএনবিসি। স্মারক অনুসারে, গুগল এই মার্চের শুরু থেকে পিপল অপারেশনস, গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের মার্কিনভিত্তিক পূর্ণ সময়ের কর্মীদের চাকরি ছাড়ার অফার দেবে এবং এ জন্য ‘ভলান্টারি এক্সিট প্রোগ্রাম’ নামের একটি কর্মসূচিও তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনপল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া নেবে ৫৪ জন২ ঘণ্টা আগেঅর্থ বিভাগের প্রধান আনাত আশকেনাজি বলেছেন, তাঁর শীর্ষ অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি হচ্ছে ২০২৫ সালে গুগল এআই অবকাঠামোতে তার ব্যয় সম্প্রসারণ করবে। এর সঙ্গে অগ্রাধিকার আরও ব্যয় হ্রাস করা। ৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানি চতুর্থ ত্রৈমাসিকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গুগল প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আশকেনাজি বলেন, গুগলের এআইয়ের জন্য তীব্র চাহিদা রয়েছে।
এইচআরের ওই স্মারক অনুযায়ী, লেভেল ৪ এবং লেভেল ৫-এর কর্মীরা ১৪ সপ্তাহের বেতন এবং কিছু সুবিধা পাবেন।
গুগলের মুখপাত্র ব্র্যান্ডন অ্যাসবেরি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের বিভিন্ন দলকে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যে নিশ্চিত করার জন্য পরিবর্তনগুলো অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।’
এ বছরের জানুয়ারিতে গুগলের নির্বাহীরা বলেছিলেন, তাঁরা প্রত্যাশিত কাটছাঁটের আগে কোম্পানির ‘প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইস’ ইউনিটের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কর্মীদের ছাটাইয়ে প্রস্তাব দেবেন। এ ইউনিটে ২৫ হাজারের বেশি পূর্ণকালীন কর্মচারী আছেন যাঁরা অ্যান্ড্রয়েড, ক্রোম, ক্রোমওএস, গুগল ফটোস, গুগল ওয়ান, পিক্সেল, ফিটবিট এবং নেস্টে কাজ করেন।
গত কয়েক বছরে গুগল একাধিকবার কর্মী ছাঁটাই করেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে, যা তাদের মোট কর্মী সংখ্যার ৬ শতাংশ। এই ছাঁটাইয়ের পেছনে ছিল খরচ কমানো এবং এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা।
আরও পড়ুনকারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে বিশাল নিয়োগ, সংশোধিত পদ ৭৫১০১ মার্চ ২০২৫২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গুগল আবার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। ব্যবস্থাপক, পরিচালক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার কর্মীদের মধ্যে ১০ শতাংশ ছাঁটাই করা হয়। এ পদক্ষেপের পেছনে ছিল কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও খরচ কমানোর উদ্যোগ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।