কাজ না করে আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে কর্মকর্তারা
Published: 3rd, March 2025 GMT
‘কালনী নদীতে পানি দেখা যার না, ইতার লাগি (এর জন্য) পিআইসি ও পাউবোর লোকজনেরও তোড়জোড় কম। তারা মনে করের পানি না আইলে, কাজ না করলেও তো অসুবিধা নাই। বরাদ্দের টেকা বাইট্টা ছিইররা (ভাগবাটোয়ারা) নেওন যাইবো, পানির অপেক্ষায় আছে বাঁধের কাম।’
এমন মন্তব্য করেছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজাপুরের বাসিন্দা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বড় গৃহস্থ আবদুস ছত্তার। তিনি বলেন, দিরাইয়ের বরাম হাওরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোয়ালিয়া বাঁধে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪০-৪৫ ভাগ কাজ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই বলছেন, কালনী নদীতে পানি কম আছে। এ জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো, উজানের পানি নাও আসতে পারে। তাহলে বাঁধে মাটি না ফেললেও চলবে। বিল তো শতভাগই তোলা যাবে।
সাবেক এই জনপ্রতিনিধি বলেন, বোয়ালিয়া ও মাছুয়ারখাড়ায় বাঁধের কাজ কম হয়েছে। এখানে ৪০ ভাগের বেশি কাজ হয়নি। অবহেলার কারণে বোয়ালিয়ার বাঁধ ভেঙে বা ওপর দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করলে মাছুয়ারখাড়ার বাঁধও ভাঙবে। একেবারে কাইলানি, ছায়ার হাওরসহ পশ্চিমাঞ্চলে কিশোরগঞ্জের কৃষ্ণপুর পর্যন্ত হাওর ডুববে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মাছুয়ারখাড়া বাঁধে গিয়ে দেখেছি কাজের ধীরগতি। বলে এসেছি, যদি বাঁধের কাজে অনিয়মের কারণে কিছু হয়, তাহলে আমার ১২ হাল (৪৮ একর) জমি ডুববে। আমার মতো শত শত কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর জমি ডুববে। কপাল পুড়বে লাখো মানুষের। আমি পিআইসির লোকজনকে বলেছি, এবার কিছু হলে জড়িত সবাইকে আসামি করে মামলা করব।
বোয়ালিয়া বাঁধের পাশের গ্রাম আমিরপুরের কৃষক শামছুল হকও জানালেন, বাঁধে ৪৫ ভাগের বেশি কাজ হয়নি।
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এসব ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বাঁধের কাজ হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিআইসি ও পাউবোর কিছু কর্মকর্তা মিলে এখানে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাদের কারণে শঙ্কায় পড়েছেন লাখো কৃষক।
জামালগঞ্জের বেশ কিছু বাঁধে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের কাজ শেষ না করেই তল্পিতল্পা নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেছে পিআইসির অনেক লোকজন। ফলে অনেক বাঁধই অরক্ষিত রয়ে গেছে। কিছু কিছু বাঁধে শ্রমিকদের কাজ করতেও দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ বাঁধ ও ক্লোজারে রক্ষণাবেক্ষণের অনেক কাজ বাকি থাকলেও দেখা মেলেনি পিআইসিসহ শ্রমিকদের। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও অধিকাংশ বাঁধে লাগানো হয়নি দূর্বা, করা হয়নি দুরমুশ। কৃষকরা বলেছেন, এখনও ৩০ ভাগেরও বেশি কাজ বাকি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, এই উপজেলায় ৯৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে হালি, শনি ও মহালিয়া হাওর ঘুরে এই দাবির সত্যতা মিলেনি।
হাওর ঘুরে দেখা যায়, হালি হাওরের বদরপুর-সংলগ্ন ঘনিয়ার বিল অংশের ২২ নম্বর পিআইসিভুক্ত ক্লোজারটি রয়েছে অধিক ঝুঁকিতে। এ বাঁধের নদীতীরবর্তী অংশে ভয়ংকর ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের নিরাপত্তায় এখন পর্যন্ত ফেলা হয়নি বস্তা, দেওয়া হয়নি বাঁশের আড়। ভয়ংকর ঝুঁকিতে থাকা এ বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে যুক্ত কাউকে বাঁধে পাওয়া যায়নি। ঠিক তার বিপরীত পারের শনি হাওর অংশের নান্টুখালী বাঁধের একাংশ নদীতে ধসে পড়তে দেখা গেছে।
শনির হাওরের স্লুইসগেট সংলগ্ন তিন নম্বর পিআইসিভুক্ত ক্লোজারটিও অরক্ষিত মনে হয়েছে। ভয়ংকর এ ক্লোজারে কোনোরকমে মাটির কাজ শেষ হলেও বাকি রয়েছে বাঁধ টেকসইয়ের সব কাজ। ভরাট করা হয়নি বাঁধের গোড়ায় থাকা হাওরের ভেতরের অংশের গর্তটি। মাস দেড়েক আগে বাঁধ-সংলগ্ন অস্থায়ী তাঁবুতে গিয়ে পিআইসি ও শ্রমিকদের আশ্রয় নিতে দেখা গেলেও ইতোমধ্যে এ অস্থায়ী ডেরা ভেঙে চলে গেছেন বাঁধের কাজে যুক্ত থাকা লোকজন।
এদিকে, মহালিয়া হাওরের দুই বাঁধের ৫ নম্বর পিআইসিভুক্ত বাঁধে এখনও মাটি ফেলার কাজই শেষ হয়নি। এ হাওরের ৪ নম্বর বাঁধে দূর্বা-দুরমুশের কাজ করতে দেখা গেলেও ৫ নম্বর পিআইসির বাঁধে কাউকে পাওয়া যায়নি। হালি হাওরের মদনাকান্দি থেকে আছানপুর অংশের ১৭ নম্বর পিআইসির বাঁধে দূর্বা-দুরমুশের কোনো কাজ এখনও করা হয়নি। আছানপুর থেকে হরিপুর পর্যন্ত ১৬ নম্বর পিআইসির কাজ চলমান। হরিপুর থেকে সুন্দরপুর বিলের খলা পর্যন্ত ১৫ নম্বর পিআইসির কাজ সন্তোষজনক। ১৪ নম্বর পিআইসিতে কেবল মাটি ফেলা হলেও আনুষঙ্গিক সব কাজ বাকি আছে। এর পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সুন্দরপুর স্লুইসগেট থেকে উলুকান্দি-যতীন্দ্রপুর পর্যন্ত বাঁধের কাজের অবস্থা একই ধরনের।
হালি হাওরের ঝুনুপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী ৭ নম্বর পিআইসিভুক্ত ক্লোজারের নদীতীরবর্তী অংশে ভয়ংকর ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ এ ক্লোজারটির টেকসইকরণের কাজ বাকি আছে। এ বাঁধের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাঁশ-বস্তা দিয়ে ঝুঁকি এড়ানোর কথা থাকলেও আশপাশে কোনো সরঞ্জাম কিংবা পিআইসি সংশ্লিষ্টদের খোঁজে পাওয়া যায়নি। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো বাঁধ ধসে পড়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে হাওর।
ঘনিয়ার বিল-সংলগ্ন ক্লোজারের নদীতীরবর্তী অংশে ভাঙনের বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। নাম প্রকাশ না করে তিনি জানান, যখন কাজ শুরু হয়, তখন উপজেলা প্রশাসন, পাউবো ও কাবিটা মনিটরিং কমিটির লোকজন বাঁধ পরিদর্শনে এসেছিলেন। তাদের পক্ষ থেকে ভাঙনের ওপর অংশের মাটি কেটে বাঁধে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় পিআইসিকে। এখান থেকে পুরোনো মাটি কেটে আনায় ভয়ংকর ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন মেরামতে যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে হাওর বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
জামালগঞ্জে ৯৩ ভাগ কাজ হয়েছে জানিয়ে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শাখা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, আমাদের মাটি ফেলার কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। শুধু মহালিয়া হাওরের একটি বাঁধে মাটি ফেলার কাজ বাকি আছে, যা আজকালের মধ্যে শেষ হবে। এ ছাড়া ঘাস লাগানোর কাজ বাকি আছে। বাঁধের কাজের সময়সীমা আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।
ভাঙনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। যদি জরুরি পরিস্থিতি মনে হয়, তাহলে আমরা জিও বস্তা ডাম্পিং করব। যেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে বাঁধ উঁচু আছে। যদি ভাঙন বাড়ে, তাতেও সমস্যা নেই।
এদিকে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, দোয়ারাবাজার এবং ছাতক উপজেলা নিয়ে বৃহৎ দেখার হাওরের ফসল রক্ষার জন্য মহাসিং নদীর দুই পারে ডাইক-১ ও ডাইক-২ নাম দিয়ে আট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি দিয়েছে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। উথারিয়া ক্লোজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এসব বাঁধে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল দেড় কোটি টাকার বেশি। নির্দেশনা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই হাওরের কোনো প্রকল্পের কাজ এখনও শতভাগ শেষ হয়নি। কোনো কোনোটিতে সামান্য ঘাস লাগিয়ে দায় সেরেছে পিআইসির লোকজন। বেশির ভাগ প্রকল্পে ঘাস লাগানোর কাজ এখনও শুরু হয়নি। দুটি প্রকল্পের কাজ হয়েছে নিম্নমানের। এর মধ্যে ৫১ নম্বর প্রকল্পের বেশির ভাগ জায়গায় মাটির বদলে বালুমাটি বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। ৪৯ নম্বর প্রকল্পের কাজ চলমান।
এই দৃশ্য শুধু দেখার হাওরেই নয়, শান্তিগঞ্জের ৬৫টি প্রকল্পে একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন কৃষক সংশ্লিষ্টরা। শনিবার দুপুরে দেখার হাওরের আটটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ছয়টি প্রকল্পে কোনো শ্রমিক বা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন নেই। দুটির একটিতে মাটির কাজ করছেন আটজন শ্রমিক এবং অন্যটিতে লাগানো ঘাসের ওপর পানি দিচ্ছেন একজন। তিনটি প্রকল্পের সামান্য অংশে ঘাস লাগিয়ে দায় সেরেছেন পিআইসির লোকজন। বাকিগুলো বিরানভূমির মতো। ধুলো উড়ছে, দেখার কেউ নেই। একাধিক বাঁধে স্লোভ ঠিক করা হয়নি। ৫১ নম্বর প্রকল্পের স্লোভে সামান্য ধাক্কায় ধসে পড়ছে ব্যবহার করা বালুমাটি। কোনো কোনো বাঁধে তুলনামূলক কম মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
৫১ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম বলেন, রোববারের মধ্যে শ্রমিকরা ঘাস লাগিয়ে শেষ করে ফেলবেন। বালুর বাঁধের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এখনও কাজ করছি, এগুলো সরিয়েছি।
৪৯ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি শফিকুন নূর বলেন, আমরা দেরিতে কাজ পেয়েছি, তাই কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি, এই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
শান্তিগঞ্জ পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা (এসও) মোমিন মিয়া বলেন, উপজেলায় হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘাস লাগানো বাকি। দেখার হাওরের কিছু কাজ দু-এক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বালুমাটি অনেকটা সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছি। আরও থাকলে তাও সরাতে বলব।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, ঘাস লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। যে কাজগুলো বাকি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার সমকালকে বলেন, শনিবার পর্যন্ত বোরো ফসল রক্ষার জন্য ৬৮৭টি প্রকল্পেই ৯০ ভাগ কাজ শেষ। এর মধ্যে ১০৫টি ক্লোজারে (ভাঙনে) ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাঁধের কাজের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত করা থাকলেও ১০ দিন মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছি।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ওর প রকল প র ক জ স ন মগঞ জ কর মকর ত শ ষ হয় ছ র ল কজন র জন য থ কল ও ক জ হয় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা