৬৫ বছর বয়স আর যাই হোক, ক্রিকেট খেলার জন্য ঠিকঠাক বয়স নয়। এই বয়সী মানুষদের নাতি-নাতনিদের সামনে নিজের পুরোনো দিনের গল্পের ঝাঁপি খুলে দিতে বেশি দেখা যায়। তবে এরপরও কেউ কেউ থাকেন ব্যতিক্রম। তেমনই ব্যতিক্রমী একজন ব্র্যাডলি ও’ডেল। শুধু খেলেই না, রীতিমতো রেকর্ডও গড়েন।

৬৫ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের স্থানীয় এক ক্রিকেট ম্যাচে নিউক্যাসল সিটি ক্রিকেটের হয়ে এই কীর্তি গড়েছেন ও’ডেল।

শনিবার নিউ সাউথ ওয়েলসের চতুর্থ স্তরের প্রতিযোগিতায় নিউক্যাসল-ওয়েলসেন্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচে ঘটেছে এই ঘটনাটি। নিউক্যাসল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ও’ডেল ১৩.

৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ১০ উইকেট।

আরও পড়ুনইনিংসে ১০ উইকেটের ১০টিই নিয়েছেন ভারতের এই পেসার১৫ নভেম্বর ২০২৪

শুধু ইনিংসের সবগুলো উইকেট নেওয়ার কীর্তিই গড়েননি তিনি, করেছেন দারুণ এক হ্যাটট্রিকও। এদিন ও’ডেলের নেওয়া ১০ উইকেটের ৫টি ছিল ক্যাচ, ৩টি বোল্ড এবং ২টি এলবিডব্লিউ। ও’ডেলের স্পিন ঘূর্ণিতে নিউক্যাসল অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৯২ রানে।

নিজের অর্জন নিয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে ও’ডেল এবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘এমন কিছু আমি আগে করিনি। নিজের এই অর্জন নিয়ে আমি দারুণ আনন্দিত। সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে উদ্‌যাপন করছিল। তারা সবাই আমাকে ঘিরে ধরেছিল। ব্যাপারটা দারুণ ছিল।’

আরও পড়ুনইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার পর যে সমস্যায় পড়বেন প্যাটেল০৫ ডিসেম্বর ২০২১

ও’ডেলের এই কীর্তি নিয়ে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রাও। নিউক্যাসলের অধিবাসী ও স্কোরার জাস্টিন মোরান বলেন ‘এই মাঠে এমন কিছু এর আগে দেখা যায়নি। সবাই জানত এটা অনেক বড় একটি মুহূর্ত। এমনকি প্রতিপক্ষ দলও ও’ডেলের এমন কাণ্ডে হতবাক।’

টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ জন ক্রিকেটার ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। ১৯৫৬ সালে ইংলিশ স্পিনার জিম লেকার ১০ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

১৯৯৯ সালে ভারতীয় স্পিনার অনিল কুম্বলে ১০ উইকেট নেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর সর্বশেষ এই কীর্তি গড়েছেন নিউজিল্যান্ড স্পিনার এজাজ প্যাটেল। ২০২১ সালের ভারতের বিপক্ষে ইনিংসের সবগুলো উইকেট একাই নিয়েছিলেন এই বাঁহাতি।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ