‍+অংশগ্রহণকারী: 

ডা. তাহমিদ আহমেদ

নির্বাহী পরিচালক, আইসিডিডিআরবি

ডা. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন

চেয়ারম্যান, কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্ট; সদস্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন

ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা

অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী

অধ্যক্ষ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ

খায়রুল ইসলাম

আঞ্চলিক পরিচালক, ওয়াটারএইড সাউথ এশিয়া

অধ্যাপক ডা.

ফারহানা দেওয়ান

প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)

অধ্যাপক ডা. আনজুমান আরা সুলতানা

লাইন ডিরেক্টর, জাতীয় পুষ্টি সেবঅধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক

পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

ডা. মো. মজিবুর রহমান

পরিচালক, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

ডা. মো. আকতার ইমাম

উপপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ

ডা. শ্যামল কুমার রায়

ল্যাবরেটরি প্রধান, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান

ফারিয়া শবনম

ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার, মাতৃ ও শিশু পুষ্টি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

সঞ্চালনা:

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

ডা. তাহমিদ আহমেদ

নির্বাহী পরিচালক, আইসিডিডিআরবি

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়াকে বলা হয় স্টান্টিং বা খর্বকায় হওয়া। এটি অপুষ্টির একটি ফলাফল। এ ধরনের শিশুর অসুস্থতার হার অনেক বেশি। তাদের অকালে মৃত্যুর হারও বেশি। গবেষণয় দেখা গেছে, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের মুখে খাওয়া টিকার কার্যকারিতা কম। যেসব শিশু খর্বাকৃতির হয়, তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ কম হয়। আমাদের দেশে অতি কৃশকায় শিশুর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। এদের মৃত্যুঝুঁকি ১১ থেকে ১২ গুণ বেশি।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে পুষ্টি। আমাদের শিশুদের খর্বাকৃতি ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে কৃশকায় হওয়ার হার ৫ শতাংশের কম হতে হবে। বাংলাদেশে এটি এখন আছে ১১ শতাংশ। আর ১৫ শতাংশ হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থার কথা বলেছে। আমরা তা থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। শিশুর জন্মের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে খর্বাকৃতির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। সারা পৃথিবীর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া খর্বাকৃতির হার বেশি।

যেসব দেশে স্বাস্থ্য খাতের মোট বাজেটের বড় অংশ খরচ হয় পুষ্টিতে, সেখানে খর্বাকৃতি, কৃশকায়, অপরিণত নবজাতক জন্ম, কম ওজনের নবজাতক জন্মের হার কম। সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাজেট তৈরির সময় এই জায়গায় আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। ১০ বছর আগে বিশ্বব্যাপী কয়েকটি দেশের উপাত্ত নিয়ে খর্বাকায় শিশুদের নিয়ে গবেষণা করেছি। তাতে দেখা যায়, শিশু জন্মের সময় তার ওজন কেমন তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কম হলে তার খর্বাকৃতির বা কৃশকায় হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। মা অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুর অপুষ্টিতে ভোগার ঝুঁকি থেকেই যায়। শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন থেকেই তার পুষ্টি গ্রহণ শুরু হয়ে যায়। গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে তার প্রথম এক হাজার দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সবচেয়ে বেশি হয়। এই জায়গায় ভূমিকা রাখলে অপুষ্টি দূর করা সম্ভব হবে।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ডের মতো যেসব দেশে পুষ্টির অবস্থা আগে খারাপ ছিল কিন্তু এখন ভালো হয়েছে, সেসব দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তৃণমূলে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিশোরীদের পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় এমএমএস (মাল্টিপল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সাপ্লিমেন্ট) দিতে হবে। এটি মা ও তার গর্ভের শিশু, উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রেস্ট ফিডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ—এটি আমাদের দেশে আরও বাড়াতে হবে। অনেক উন্নত দেশেও এ হার আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। তারা এটি করতে পারলে আমরা কেন পারব না।

তোলা খাবার বা পরিপূরক খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর খাবারের মধ্যে সবজি থাকতে হবে। তাকে অর্ধেকটা হলেও ডিম দিতে হবে। বাকি অর্ধেক মা খেতে পারেন। মায়েরও পুষ্টির প্রয়োজন। খাবার অল্প হলেও ছোট মাছ রাখতে হবে। ইপিআই কর্নার থেকেও এ বিষয়ে কিছুটা কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। কমিউিনটিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা জরুরি। কিশোরীদের পুষ্টিজ্ঞান বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যালয়ে খাবারের বৈচিত্র্য সম্পর্কে শেখাতে হবে। এ বিষয়টি শিক্ষাক্রমে যুক্ত করতে হবে এবং প্রাথমিকের শিক্ষকদের কার্যকর ও অর্থবহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

শহরের বস্তিতে অনেক বেশি মানুষের বসবাস। তাদের এখানে স্যানিটেশন থেকে শুরু করে কোনো ব্যবস্থাই স্বাস্থ্যকর নয়। বস্তিতে খর্বাকৃতির হার জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শহরের বস্তির শিশুদের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিশেষ নজর দেবেন। সারা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ওএমএস কর্মসূচি চালু রাখতে হবে, অনেক মানুষ এ থেকে উপকৃত হয়। ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির দিতে নজর দিতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যকর নাশতার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে। আইসিডিডিআরবির পক্ষ থেকে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।

ডা. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন

চেয়ারম্যান, কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্ট; সদস্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন

অপুষ্টির কারণে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয় না। শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাসহ তার প্রথম এক হাজার দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শিশুর পুষ্টির ঘাটতিতে যে ক্ষতি হয়, তা কখনোই পূরণ হয় না। শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে এ ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে এবং বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে মায়েদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে তাঁরাই বড় ভূমিকা নিতে পারেন।

বাংলাদেশে অপুষ্টির কারণে প্রতিবছর কমপক্ষে সাত হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। শিশুর অপুষ্টি দূর করতে বহু পক্ষের সমন্বয় প্রয়োজন। অনেক অর্থ খরচ করার পরও এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিংয়ের হার এখনো ৫০ শতাংশে আটকে আছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ নিয়ে কাজ করছে।

মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে কমিউনিটি পর্যায়ে এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অনেকগুলো জরিপের উপাত্ত পুরোপুরি সঠিক নয়। স্বাস্থ্য ও পুষ্টির প্রশিক্ষণও অর্থবহ নয়। অর্থবহ প্রশিক্ষণ ও যথাযথ উপাত্ত না পেলে ভালো পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়, বাস্তবায়নও সম্ভব হবে না। সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণার উপকরণে যেসব বার্তা থাকে, তা সহজ ভাষায় সবার বোঝার উপযোগী করে তৈরি করা জরুরি। আমাদের চিকিৎসক বা প্রান্তিক পর্যায়ে যে কর্মীরা আছেন, তাঁদেরকে গণযোগাযোগের কৌশলের ওপর জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশে কমিউনিটি পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁরা সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন। ফলে সব ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সেবা প্রদান সম্ভব হয় না। তাঁদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি একটি সমাধান পাওয়া যাবে।

ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা

অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

শিশুর জীবনের প্রথম ২৪ মাসে পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু প্রথমত মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে পুষ্টি পায়। শিশুর বয়স ছয় মাস হলে মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি পরিপূরক খাদ্যও দিতে হবে। এ ধরনের খাদ্য কেমন হওয়া উচিত? এই খাবার কঠিন, অর্ধকঠিন বা তরলও হতে পারে। তবে এতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান, যেমন আমিষ, স্নেহ, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকা প্রয়োজন। এই খাদ্যের মাধ্যমে শিশু সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে, একই সঙ্গে তার মস্তিষ্কের বৃদ্ধিও নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় অপুষ্টির কারণে অনেক শিশু খর্বকায় ও কৃশকায় হচ্ছে। এ ধরনের শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল থাকে, ফলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। বাংলাদেশে শিশু অপুষ্টির কারণ হতে পারে প্রথমত, আমরা যে মানসম্পন্ন খাদ্যের কথা বলছি, তা আমাদের শিশুরা পাচ্ছে না। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, যে পরিমাণে খাদ্য তাদের পাওয়ার কথা ছিল, সে পরিমাণে তারা পাচ্ছে না। এটা ক্রয়ক্ষমতা বা অন্য যেকোনো কারণে হতে পারে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যে বৈচিত্র্য কম।

শিশুদের খাদ্যের মান কেমন হবে, খাবারের বৈচিত্র্যতা, কতবার সে খাবে, কতটুকু খেতে পারবে, সে জন্য একটা সূচক রয়েছে, যা সরকারের উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এটি হয়তো সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমরা যে জায়গায় পৌঁছাতে চাই, তা থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছি। সুতরাং এ কথা বলা যায়, দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের পরিপূরক খাদ্য খুবই অপ্রতুল। এ বিষয়টি বিবেচনা করে আমাদের পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, পুষ্টিবিষয়ক শিক্ষা ও বরাদ্দের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটি করা গেলে আমাদের সন্তানেরা স্বাস্থ্যকরভাবে ও সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠবে।

TANVIR AHAMMED

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর আম দ র স ক জ কর পর প র প রথম সবচ য় ত করত ধরন র ব ষয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে তাঁর আগের কর্মস্থলের এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা গবেষণাপত্রের অংশ নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগ দেওয়া ওই সাবেক শিক্ষার্থীর নাম রিফাত সুলতানা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ইসরাত জাহান। ওই সময়ের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই বছর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন ইসরাত জাহান।

জানতে চাইলে ইসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থী আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে, কখনো ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সে নিজেই একাধিকবার আমার সঙ্গে যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি দীর্ঘদিন তাকে পড়িয়েছি, আমিই তাকে সব সময় উৎসাহিত করেছি থিসিসে। কিন্তু অভিযোগে এবং গণমাধ্যমে সে যেসব কথা বলেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। আমি তার সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনা করেই জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কেন সে অভিযোগ করল, এটাই বুঝতে পারছি না।’

২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসরাত জাহানের অধীন রিফাত সুলতানা একটি থিসিস করেন। যার শিরোনাম ‘সাবজুগেশন, মার্জিনালাইজেশন অ্যান্ড ডাবল কলোনিজেশন: আ রিডিং অব দ্য অবরোধবাসিনী, দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস অ্যান্ড দ্য গড অব স্মল থিংস’। ওই থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস’ জার্নালে ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স: আ কোয়েস্ট ফর সেলফ ইন শশী দেশপান্ডে’স দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন ইসরাত জাহান। এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানাকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত ১৩ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পাঠান রিফাত সুলতানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রিফাত সুলতানা অভিযোগ করেন, ইসরাত জাহান তাঁর অনুমতি ছাড়া এমএ থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এ ছাড়া থিসিসের অন্যান্য অংশও, যেমন ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে পাঠানো থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকের নাম প্রকাশে তাঁর সম্মতি নেননি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

রিফাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ২২ এপ্রিল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আমার অভিযোগের তদন্ত না করে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে তারা। তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে।’

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাঁদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিফাত সুলতানা আরও বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন, থিসিস থেকে শিক্ষার্থী এবং সুপারভাইজার দুজনেই নাকি একক লেখক হিসেবে গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো সুপারভাইজার চাইলেই শিক্ষার্থীর থিসিস থেকে প্রথম লেখক হিসেবে আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে থিসিসকারী শিক্ষার্থী অনুমতি না নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করাকে তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন না।’

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা। ইসরাত জাহান এই গবেষণা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রকার সুবিধা নেননি। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এটি তাঁদের যৌথ কাজ ছিল। ইসরাত যে গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীর নামও দিয়েছেন। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ করায় আমরা এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং অভিযোগকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানান চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ