বর্মি স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব মসজিদ (আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টায় তুলবেন)
Published: 4th, March 2025 GMT
সাদার ওপর লাল-কালো নকশার ইট-সুরকিতে তৈরি শতবর্ষ পুরোনো মসজিদ। বড় বড় স্তম্ভের ওপর পাঁচটি খিলান ও তিন গম্বুজের মসজিদটি যেন এক শিল্পকর্ম। খিলানের ওপর মসজিদের দেয়ালজুড়ে লতা-পাতা আর ফুলের মোটিফ, সাবেকি গ্রামবাংলার কারুকার্য। অপূর্ব শৈলীর এই মসজিদের অবস্থান নিরিবিলি এক গ্রামে। চারদিকে ফসলের খেত আর পাখির কূজন। গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথিকদের একবার না একবার থামতে হয় মসজিদটির সামনে। এর নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ না হয়ে যে উপায় নেই।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মিঠানালা গ্রামে এই মসজিদের অবস্থান। সবুজ-শ্যামল গ্রামটিতে পাখপাখালির কূজন ছাড়া নেই তেমন কোনো কোলাহল। এই গ্রামের মধ্যভাগে স্থাপিত শতবর্ষী একটি মসজিদটি দৃষ্টি কাড়ে সবার। এলাকার মানুষের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে ১৯১৬ সালে মসজিদটি স্থাপন করেন স্থানীয় জনহিতৈষী ব্যক্তি হাজী গোলাম সুলতান। তার নাম অনুসারে তৈরি মসজিদটি এলাকায় হাজী গোলাম সুলতান জামে মসজিদ নামে পরিচিত।
হাজী গোলাম সুলতানের নাতি ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা হাজী গোলাম সুলতান ছিলেন সম্পদশালী ব্যক্তি। গোলাম সুলতানের বাবা এলাহী বক্সের চার ছেলের সবাই মিয়ানমারের রেঙ্গুনে খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করতেন। সেই সন্তানদের একজন হাজী গোলাম সুলতান এলাকাবাসীর নামাজ পড়ার সুবিধার্থে এই মসজিদ স্থাপন করেন।
১৯১৬ সালে মসজিদটির প্রাথমিক কাঠামো স্থাপন হলেও ১৯২০ সালে মিয়ানমার থেকে কারিগর এনে বর্মি স্থাপত্যরীতিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির ভেতরে ও বাইরে ফুল পাখি আর লতাপাতার কারুকাজ স্থাপত্যটিকে অনন্য করে তুলেছে। প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর স্থাপিত মসজিদটির চারপাশে আছে পোড়া ইট আর সুরকির তৈরি পুরু নিরাপত্তা দেয়াল। সুদৃশ্য মিনারের তিন গুম্বজবিশিষ্ট মসজিদটি চোখে পড়ে অনেক দূর থেকে।
ফরিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, শুধু মসজিদ নির্মাণ করেই দায়িত্ব শেষ করেননি তার দাদা হাজী গোলাম সুলতান। মসজিদটির পরিচালন ব্যয় যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সে জন্য তিনি মসজিদের নামে দান করে গেছেন ১২ একরের বেশি কৃষি জমি। এসব জমির আয় থেকে এখন মসজিদটি যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়। তবে আক্ষেপের বিষয়ে, কয়েক দফায় সংস্কার করতে গিয়ে মসজিদটির পুরোনো কারুকাজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
গত ৩০ বছর ধরে মসজিদটির মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পূর্ব মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা সালেহ আহমদ। তিনি জানান, এই জনপদের জন্য হাজী গোলাম সুলতান জামে মসজিদটি বেশ প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম সুলতান হলেও এটি এখন গ্রামের সব মানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ঈদের নামাজের জামাতসহ বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোয় মসজিদ প্রাঙ্গণ এখন প্রাণবন্ত থাকে সব সময়। মসজিদের কল্যাণে তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। মসজিদটির সৌন্দর্যের টানে এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এটি দেখতে আসেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।