রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধীদের ‘পৃষ্ঠপোষক’কে নিয়োগ
Published: 4th, March 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ দপ্তরে অনুসন্ধান কাম তথ্য কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ রাশেদুল ইসলামের নিয়োগের পেছনে কয়েকজন সমন্বয়ক প্রভাব খাটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলেন, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ কথাগুলো বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসের ছয়টি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব আল শাহরিয়ার শুভ, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সিকদার ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি শামিন ত্রিপুরা। লিখিত বক্তব্য দেন রাকিব হোসেন।
রাকিব হোসেন বলেন, ‘রাশেদুল ইসলাম রাবির সমন্বয়কদের পৃষ্ঠপোষক। তিনি স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক। সবার জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই মেহেদী সজীব, ফাহিম রেজাসহ স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের আরও কয়েকজন সদস্য রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেলে আছেন। আমাদের ধারণা, অতীতের আওয়ামী লীগের মতো মেহেদী সজীব, ফাহিম রেজাসহ কতিপয় সমন্বয়কেরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়েছে এবং এই নিয়োগের পেছনে তাঁরা জড়িত থাকতে পারেন। স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই নিয়োগ সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য নিয়োগসহ একাধিক নিয়োগে সমন্বয়কদের প্রভাব রয়েছে দাবি করে রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন সমন্বয়কের মধ্যে ১২ জন সম্মত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য নিয়োগে কলকাঠি নেড়েছে। আমাদের আশঙ্কা, সমন্বয়ক পরিচয়ের প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রশাসনকে জিম্মি করে রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সমন্বয়কদের এই অংশ শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়া নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করছে। এ ছাড়া অতীতে জনসংযোগ দপ্তরে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসকও সমন্বয়ক মেহেদী সজীবের বিভাগের ঘনিষ্ঠ শিক্ষক। তা ছাড়া বিভিন্ন হল প্রাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল।’
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য কর্মকর্তা পদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘পৃষ্ঠপোষক’কে নিয়োগ১৭ ঘণ্টা আগেরাশেদুল ইসলামের নিয়োগ ২৪-এর অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী ও দুই হাজার শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানির শামিল বলে মন্তব্য করেন রাকিব হোসেন। অবিলম্বে তাঁর নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, রাশেদুল ইসলামের একাডেমিক ফলাফল এবং সামগ্রিক বিষয়ে উপাচার্য অবগত নন। এই নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হওয়ায় তাঁরা নিয়োগ দেওয়ার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। অতি দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার এবং অনতিবিলম্বে রাশেদুলের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।’
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে রাশেদুল ইসলামকে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে অনুসন্ধান কাম তথ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন। এ নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ দ ল ইসল ম র সমন বয়কদ র সমন বয়ক উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ