চুনারুঘাট উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নতুন সম্ভাবনা হয়ে সামনে এসেছিল কেদারাকোর্টে অবস্থিত বাল্লা স্থলবন্দর। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের আশা ছিল, বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। অন্যান্য বন্দর এলাকার মতো কেদারাকোর্টেও বাড়বে কর্মসংস্থান। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অসহযোগিতায় সে স্বপ্ন ভাঙার দ্বারপ্রান্তে।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের হতাশায় ডুবাল বাল্লা স্থলবন্দর বন্ধের আশঙ্কা। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ অলাভজনক হওয়ায় একাধিক স্থলবন্দর প্রাথমিকভাবে বন্ধের সুপারিশ করেছে; যার একটি হচ্ছে চুনারুঘাটের এ স্থলবন্দরটি। কর্তৃপক্ষের একটি উচ্চপর্যায়ের যাচাই কমিটি এ প্রতিবেদন দিয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্লা স্থলবন্দরের বাংলাদেশ অংশে অবকাঠামো নির্মাণ হলেও ভারতীর অংশে কোনো অবকাঠামো ও সড়ক সুবিধা না থাকায় স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ভারতীয় অংশে অবকাঠামো ও সড়ক সুবিধা না থাকায় বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রাখা যেতে পারে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
স্থানীয়রা জানান, ১৯৫১ সালে ৪.৩৭ একর জায়গায় বাল্লা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭১ বছর পর ২০১২ সালে বাল্লা স্থলবন্দর আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে আগের স্থান থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কেদারাকোট এলাকায় ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হয় প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। এরপর এখন এটি বন্ধ হয়ে যাওয়া হতাশার।
তারা বলছেন, অবকাঠামো নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলেও ভারতীয় অংশে তৎপরতা না থাকায় একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হলো। স্বাভাবিকভাবেই কমিটি বাল্লা স্থলবন্দরটি বন্ধের সুপারিশ করেছে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। অর্থের অপচয় হয়েছে। দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য যেসব স্থলবন্দর উপকারী হবে, সেগুলো সচল রাখা হবে।
২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বর্তমান বাল্লা স্থল শুল্কবন্দরটি পাশ কাটিয়ে বাল্লা থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে গাজীপুর ইউনিয়নের ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে কেদারাকোর্ট এলাকায় বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়। কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। পরে বাল্লা স্থলবন্দরকে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর ঘোষণা করেন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জের তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক মাধব রায়ের তদবিরে বাল্লা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়।
আধুনিক স্থলবন্দরে যা যা দরকার, তার সবই আছে বাল্লা বন্দরে। যেমন– ওয়্যারহাউজ, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, ট্রাক পার্কিং ইয়ার্ড, ওপেন ইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন ও ডরমিটরি। এসব স্থাপনা নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণের আগে এ স্থানে শতাধিক পরিবার বসবাস করতেন। স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হলে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ অনেকেই ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা এখনও পাননি।
এদিকে বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ১৬টি পরিবার স্থলবন্দরের সীমানার ভেতরে বসবাস করছেন। ভেতরে গরু-বাছুর চড়াচ্ছেন আর বন্দর পাহারা দিতে দেখা গেছে মাত্র একজন আনসার সদস্যকে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সিন্ডিকেট করে বন্দর এলাকায় কয়েক একর জমি কিনেছিলেন। এখন সেই জমিও তাদের গলার কাঁটা। বন্দর চালু না হওয়ায় এখন তারা চড়া দামে জমিও বিক্রি করতে পারছেন না। চড়া মূল্য দেখালেও জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণ করা জমির তেমন মূল্য তারা পাননি।
চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ। ভারতের অংশে কোনো কাজ হয়নি। ভারত যদি স্থলবন্দর নিয়ে কোনো আগ্রহ না দেখায় এবং সহযোগিতা না করে, তাহলে বাল্লা স্থলবন্দর কোনো কাজে আসবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপচয় অবক ঠ ম ন পর ব এল ক য় বন ধ র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’