নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে ধোঁয়াশা কাটুক
Published: 5th, March 2025 GMT
১৫ ফেব্রুয়ারি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সূচনা বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, পরে তাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক হবে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে বলে ৪ মার্চ প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যায়। অবশ্য এর আগে কমিশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে মতামত নেবে। বিলম্বে হলেও সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সংস্কারপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে জুলাই সনদ তৈরির কথা বলা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এর অংশ হিসেবে কমিশন সংস্কার প্রস্তাবের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে একটি ছক তৈরি করছে। সেখানে প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দলগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট মতামত চাওয়া হবে। কোনো সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না এবং সেটি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন (নির্বাচনের আগে বা পরে) বলে মনে করে—এসব বিষয়ে দলগুলো দেবে। এরপর দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করে আলোচনা শুরু হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করছে। বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপি দলীয়ভাবে আলাদা সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য ছয়টি কমিটি গঠন করেছিল। সংশ্লিষ্ট কমিটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে। ‘রাষ্ট্র সংস্কারে’ ৩১ দফা প্রস্তাবকে প্রাধান্য দেবে তারা। জামায়াতে ইসলামীও ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন, না জাতীয় নির্বাচন আগে—এটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক আছে। নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বেশ কিছু দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষপাতী। অন্যদিকে বিএনপি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট সবার আগে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা জাতীয় নির্বাচনকে নিশানা করে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একাধিকবার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন। এই সময়সীমা নিয়ে কোনো দলের বড় ধরনের আপত্তি আছে বলে মনে হয় না। তবে তারা নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা চায়। আমরা মনে করি, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু হলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর ১০-১১ মার্চ নাগাদ আলোচনা শুরু করা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
তাঁর বক্তব্যে সরকারের অবস্থান অনেকটা পরিষ্কার। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আছে, সেসব বিষয়ে খুব আলোচনার প্রয়োজন হবে না। তবে যেসব বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে, সেসব বিষয় সংলাপে গুরুত্ব পাওয়ার কথা। সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা আছে, আলোচনার মাধ্যমে তা কেটে যাবে আশা করি। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু হোক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’
‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’
উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’
আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।