গৃহকর্মী কিশোরীকে গরম খুন্তির ছেঁকা-নির্যাতন, মামা-মামি গ্রেপ্তার
Published: 7th, March 2025 GMT
চাঁদপুরে কিশোরী ভাগনিকে নির্যাতনের অভিযোগে মামা-মামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতে গতকাল বৃহস্পতিবার মামা-মামির বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। পরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নির্যাতনের শিকার রোজিনা আক্তার (১৫) চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভূঁইয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন আলী আহম্মদ ভূঁইয়া। রোজিনা চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘এক বছর আগে রোজিনাকে ঢাকায় আমার বড় মেয়ের কাছে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে না জানিয়ে রোজিনার মামা রুবেল মোল্লা তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তান রিফাতকে দেখাশোনা করার কথা বলে তাকে (রোজিনা) ঢাকায় বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু রোজিনাকে গৃহকর্মীর কাজ করানো হতো। গত জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে চলে আসেন রুবেল মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। এক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে রোজিনাকে দেখা করতে এবং কথা বলতে দেননি তাঁরা।বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজিনা মামা-মামির নির্যাতন সইতে না পেরে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন রোজিনার অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথম থানায় নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করায়।’
রোজিনা জানায়, নানা অজুহাতে মামা-মামি তাকে মারধর করত। ধারালো দা, ছুরি দিয়ে শরীরে আঘাত করেছে। পিঠে ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে। গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিত। পায়ের আঙুলগুলো থেঁতলে দিয়েছে। ঠিকমতো খাবার দিত না। মা–বাবার সঙ্গেও দেখা বা কথা বলতে চাইলে দিত না। গতকাল বাসায় মামি ছিল না। তখন সে ঘর থেকে পালিয়ে বাইরে চলে আসে।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাহার মিয়া বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। অভিযুক্ত দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।